চলতি বছর ছয় মাসে দেশে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ১১১%


নিজস্ব প্রতিবেদক
: কভিড সংক্রমণ বৃদ্ধিতে কয়েক দফা লকডাউনে দেশের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জাহাজ ভাঙা শিল্পে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ জাহাজ ভাঙা বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১১১ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) জাহাজ ভাঙা বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০০ শতাংশ।
জাহাজ ভাঙা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের সর্বশেষ প্রান্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয়েছে ২৫৮টি। এর মধ্যে ৮০টি বা ৩১ শতাংশ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয়। আর চলতি বছর প্রথম তিন মাসে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হযেছে ২০৪টি। এর মধ্যে ৭৬টি বা প্রায় ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয়। অর্থাৎ ছয় মাসে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ১৫৬টি। আর বিশ্বে এ সময় জাহাজ ভাঙা হয় ৪৬২টি। অর্থাৎ বিশ্বের ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ জাহাজ বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোর ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ৯৬টি। আর প্রথম তিন মাসে ভাঙা হয় ১৬৬টি জাহাজ। অর্থাৎ ছয় মাসে মোট জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ২৬৪টি। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২০টি ভাঙা হয়েছিল বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয়। আর প্রথম তিন মাসে ভাঙা হয়েছিল ৫৪টি। অর্থাৎ গত বছর ছয় মাসে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা হয় ৭৪টি।
এ হিসাবে চলতি বছর ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ৮২টি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিক বিবেচনা করলে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ৩০০ শতাংশ।
সংস্থাটির তথ্যমতে, গত বছর প্রথম ছয় মাসে জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে ছিল ভারত। তবে চলতি বছর দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে দেশটি। এ
সময় দেশটিতে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ১২৪টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৫টি। এছাড়া চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে পাকিস্তানে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ৭২টি, তুরস্কে ৫৪টি, চীনে তিনটি ও ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৫৩টি। গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৭টি, ৪৪টি, ১০টি ও ২৪টি। অর্থাৎ চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে ভারত ও পাকিস্তানে জাহাজ ভাঙা বাড়লেও কমেছে তুরস্ক ও চীনে। আর ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ সংখ্যা বেড়েছে।
এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৬৩০টি। এর মধ্যে ভারতে ভাঙা হয়েছে ২০৩টি, বাংলাদেশে ১৪৪টি, পাকিস্তানে ৯৯টি, তুরস্কে ৯৪টি, চীনে ২০টি ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬০টি। আর ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৬৭৬টি। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ভাঙা হয়েছিল ২৩৬টি। এছাড়া ভারতে ২০০টি, তুরস্কে ১০৭টি, পাকিস্তানে ৩৫টি, চীনে ২৯টি ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৯টি জাহাজ ভাঙা হয়।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর সংখ্যার দিকে জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে ছিল ভারত। তবে পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ওই সময় বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল প্রায় এক কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৭০৪ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৪ টন। এতে পরিমাণের দিক থেকে টানা ছয় বছর শীর্ষস্থান ধরে রাখে বাংলাদেশ।
এর বাইরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৩ টন, তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ২২ লাখ ৫৬ হাজার ৭০৫ টন ও চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্কে ভাঙা হয় ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৮ টন জাহাজ। এছাড়া চীনে দুই লাখ ১৬ হাজার টন ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৪ টন জাহাজ ভাঙা হয়েছে গত বছর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়িসহ বড় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। পাশাপাশি আবাসন খাতেও মন্দা কাটতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশে রডের চাহিদা বেড়ে যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পেও লোহার ব্যবহার বাড়ে। এ চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রাখে জাহাজ ভাঙা শিল্প। ফলে এ শিল্পে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০