শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী দেশটির অর্থমন্ত্রী জাফরুল আজিজ। বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি সত্ত্বেও মালয়েশিয়ায় ভোক্তা চাহিদা বা ব্যয় ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে এ প্রত্যাশা করেছেন তিনি। খবর: ব্লুমবার্গ।
সিঙ্গাপুরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্লুমবার্গ লাইভ ফোরামে জাফরুল আজিজ বলেন, মালয়েশিয়ার অর্থনীতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে আট দশমিক নয় শতাংশ বেড়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা তার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমান, পুরো বছরের প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ থেকে ছয় দশমিক তিন শতাংশ পূর্বাভাসের ওপরের প্রান্তে থাকবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী মাসের বার্ষিক বাজেটের সময় নতুন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ঘোষণা করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সরকারকে সাহায্য করবে। তবে আসন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তৈরি করেছে। এতে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। আগামী ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের বাজেট উত্থাপন করা হবে। এতে সরকার জনসাধারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও স্থানীয় সরকারের ওপর গুরুত্বারোপ করবে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সাল হবে অর্থনৈতিক সংস্কারের বছর। তবে বছরটিতে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আগামী বছর সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, কেননা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে আমাদের অর্থনীতিও।
মালয়েশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। গত জুনে দেশটির আমদানি ও রপ্তানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনসে সেরা পারফরমারদের মধ্যে রয়েছে। ১০ দেশ নিয়ে গঠন করা হয়েছে এ সংগঠন।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে মালয়েশিয়ার জিডিপি বাড়ে পাঁচ শতাংশ। যদিও আগের প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল তিন দশমিক ছয় শতাংশ। চাহিদা পুনরুদ্ধার ও শ্রমবাজার শক্তিশালী হওয়ায় দেশটির জিডিপিতে এমন ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তখন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ থেকে ছয় দশমিক তিন শতাংশের মধ্যে রাখে।
এছাড়া গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার মুদ্রা রিঙ্গিতের মান কমে ১৯৯৮ সালের এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের পর সর্বনিন্ম হয়েছে। এ কারণে দেশটিতে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়ে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়া) সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বার্ষিক ভিত্তিতে এ সময় বেকারত্বের হার কমে। গত বছর জুলাইয়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে চলতি বছর একই সময় দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশে। আরও আগে ২০২০ সালের মে মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাই বেকারত্বের হার কমে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বৈশ্বিক নানা সমস্যার পাশাপাশি ডলারের শক্তিশালী অবস্থানও লক্ষ্য করছি। তাছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। তবে জাপানি ইয়েন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওন, এমনকি যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিংয়ের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে রিঙ্গিত। তবু ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের অবমূল্যায়ন বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছর মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ক্ষত আরও গভীর হয়। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচন বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১৯৯৮ সালে এশিয়ায় তৈরি হওয়া আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে বাজে অবস্থার দিকে এগোয় দেশটির অর্থনীতি। তবে ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে। করোনার কারণে কেবল জরুরি পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন ছাড়া বলতে গেলে দেশটির প্রায় সব সেক্টর
বন্ধ ছিল। ফলে অর্থনৈতিক গতি মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে যায়। সে সময় বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছিল, মালয়েশিয়ার শক্ত ভিত্তি থাকায় অর্থনীতি দ্রুত গতি পাবে। সেটাই ২০২১ সালের শেষের দিকে লক্ষ্য করা যায়।