নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। গতকাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। তবে বিষয়টি পরীক্ষার ২ থেকে ৩ মাস আগে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে চলতি বছর অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেয়া হবে না বলে আগেই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মো. মনসুরুল আলমসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী একেবারেই বাতিল করার চিন্তা-ভাবনা করছেন কি নাÑপ্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন যে কারিকুলাম রয়েছে সেখানে পরীক্ষাটা নেই। আমরা শিক্ষাবিদসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল। আমরা শিখন ঘাটতি পূরণে আর একটুও টাইম নেই। আমরা ঘাটতি পূরণ করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাব। সমাপনী পরীক্ষা নভেম্বরের দিকে হয়, আমরা ২ থেকে ৩ মাস আগে জানাব। এখনই জানালে কোচিং সেন্টারে সব লাইন ধরবে।’
ডিজি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পাঠে ব্যস্ত থাকুক। তাদের টেনশনে ফেলতে চাই না। তারা শিখন যোগ্যতা যাতে অর্জন করতে পারে সেজন্য পরীক্ষার টেনশন দিতে চাই না। ভবিষ্যতে এই সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না।’
সচিব বলেন, ‘বড়দের শিখন প্রক্রিয়া এবং বড়দের শিখন প্রক্রিয়া ভিন্ন। এখনই জানিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটা ব্যাহত করতে চাই না। আমরা আরেকটু সময় নিয়ে ঘোষণা দেব। পরীক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের (২০২০) লিখিত পরীক্ষা আজ শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাপে আজ ২২ জেলায় ও দ্বিতীয় ধাপে ২০ মে ৩০ জেলায় এবং ৩ জুন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩১টি জেলায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন পরীক্ষার্থী। তিন ধাপে মোট ৬১টি জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ৬১ জেলায় তিন ধাপে এক হাজার ৮১১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।’
তিন ধাপের এই নিয়োগ পরীক্ষা আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করার জন্য মানসম্মত শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই।’
চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ইতোমধ্যে সারাদেশে অবসরজনিত কারণে আরও ১০ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষক ঘাটতি নিরসনকল্পে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।