বিশেষ প্রতিনিধি: বিলাসপণ্য হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি-বাইক আমদানি নিরুৎসাহিত করা, ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারা, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে চলতি বছর শুরু থেকে মোটরযান আমদানির বাজারে মন্দা চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতিতে চলা নীরব মন্দা ও ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি। এসব কারণে চলতি বছর সব ধরনের মোটরযান বিক্রি কমে গেছে।
এতে চলতি বছরের ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) মোটরযান নিবন্ধন কমে গেছে ৩৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন কমেছে ডেলিভারি ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) ও ট্রাকের। এ যানগুলোর নিবন্ধন কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। তবে পুরোনোগুলো প্রতিস্থাপনের কারণে চলতি বছর নিবন্ধন বেড়েছে অটোরিকশা ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারের।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধন নিয়েছিল চার লাখ ৮৭ হাজার ২২১টি মোটরযান। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ পাঁচ হাজার ১৮২টি। অর্থাৎ ১০ মাসে মোটরযান নিবন্ধন কমেছে এক লাখ ৮২ হাজার ৩৯টি। এর মধ্যে বড় অংশই (প্রায় ৯০ শতাংশ) কমেছে বাইক নিবন্ধন। চলতি বছর ১০ মাসে বাইক নিবন্ধন নিয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৬১৩টি, গত বছর যার সংখ্যা ছিল চার লাখ ২৫ হাজার ৮৬৪টি। অর্থাৎ ১০ মাসে বাইক নিবন্ধন কমেছে এক লাখ ৬৪ হাজার ২৫১টি বা ৩৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছর ১০ মাসে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছে আট হাজার ৯৬৮টি, গত বছর যার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৫০৭টি। অর্থাৎ ১০ মাসে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন কমেছে পাঁচ হাজার ৫৩৯টি বা ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর চলতি বছর জিপ (হার্ড/সফট) নিবন্ধন নিয়েছে ছয় হাজার ৫০৩টি, গত বছর যার সংখ্যা ছিল আট হাজার ৮৬২টি। অর্থাৎ ১০ মাসে জিপ নিবন্ধন কমেছে দুই হাজার ৩৫৯টি বা ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। একইভাবে চলতি বছর ১০ মাসে মাইক্রোবাস নিবন্ধন কমেছে এক হাজার ৯৮৮টি বা ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চলতি বছর সারাদেশে ১০ মাসে মাইক্রোবাস নিবন্ধন নিয়েছে চার হাজার ৩২৫টি, গত বছর যার সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৩১৩টি।
গণপরিবহনের মধ্যে চলতি বছর বাস নিবন্ধন সবচেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে। ১০ মাসে বাস নিবন্ধন নিয়েছে দুই হাজার ১৩৯টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৮৬টি। অর্থাৎ ১০ মাসে বাস নিবন্ধন কমেছে মাত্র ১৪৭টি বা ছয় দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ১০ মাসে মিনিবাস নিবন্ধন নিয়েছে ২৬২টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল ৩৩০টি। অর্থাৎ ১০ মাসে মিনিবাস নিবন্ধন কমেছে মাত্র ৬৮টি বা ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর হিউম্যান হলার গত বছর ও চলতি বছর একই পরিমাণ (৯টি করে) নিবন্ধন নিয়েছে।
স্বল্প দূরত্বে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষত শহর এলাকায় পিকআপের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। চলতি বছর ১০ মাসে সারাদেশে পিকআপ নিবন্ধন নিয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল আট হাজার ৪৯৯টি। অর্থাৎ ১০ মাসে পিকআপ নিবন্ধন কমেছে দুই হাজার ৫৮৬টি বা ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর এসপিভি ১০ মাসে নিবন্ধন নিয়েছে ১৬০টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল ৩৪৫টি। অর্থাৎ ১০ মাসে এসপিভি নিবন্ধন কমেছে ১৪৭টি বা ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
পণ্যবাহী যানের মধ্যে চলতি বছর ১০ মাসে ডেলিভারি ভ্যান নিবন্ধন নিয়েছে মাত্র ৩৭৩টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল এক হাজার ২২টি। অর্থাৎ ১০ মাসে ডেলিভারি ভ্যান নিবন্ধন কমেছে ৬৪৯টি বা ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। একই সময়ে কাভার্ড ভ্যান নিবন্ধন কমেছে দুই হাজার ৩৬২টি বা ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। চলতি বছর ১০ মাসে কাভার্ড ভ্যান নিবন্ধন নিয়েছে এক হাজার ৬৬৭টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল চার হাজার ২৯টি।
অন্যদিকে চলতি বছর ১০ মাসে ট্রাক নিবন্ধন নিয়েছে মাত্র দুই হাজার ৪৮টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৫৫টি। অর্থাৎ ১০ মাসে ট্রাক নিবন্ধন কমেছে দুই হাজার ১০৭টি বা ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্যান্য মোটরযানের মধ্যে তেলবাহী ট্যাঙ্কার চলতি বছর ১০ মাসে নিবন্ধন নিয়েছে ২৯৭টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল ২৮৬টি। অর্থাৎ ১৩টি ট্যাঙ্কার নিবন্ধন বেড়েছে। একইভাবে চলতি বছর ১০ মাসে অটোরিকশা নিবন্ধন নিয়েছে আট হাজার ৩২০টি, গত বছর একই সময়ে যার সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২১টি। অর্থাৎ অটোরিকশা নিবন্ধন বেড়েছে দুই হাজার ২৯৯টি।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, এসব মোটরযানের বাইরে চলতি বছর ১০ মাসে অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধন কমেছে ৩০৮টি এবং অন্যান্য যানবাহন নিবন্ধন কমেছে এক হাজার ৫০৯টি।