চলনবিলে পিঠার কদর

গত কয়েক দশকের রের্কড ভেঙেছে শীত। প্রতিবছর শীতের আগমন থেকে শুরু করে শীতের শেষ পর্যন্ত চলনবিলের ঘরে ঘরে চলে পিঠাপুলির উৎসব। পিঠা বাঙালির প্রিয় খাবার। এ দেশে এমন মানুষ কমই আছে, যারা পিঠা পছন্দ করে না। পিঠা নিত্যদিনের খাবার না হলেও শীতকালে চলনবিলের ঘরে ঘরে পিঠার ব্যাপক কদর রয়েছে। উৎসব আয়োজনে খাবারটি তৈরি করা হয়। বর্তমানে শুধু বাড়িতে নয়, বরং চলনবিলের হাটবাজারেও হরেক রকমের পিঠার কদর বেড়েছে। সম্প্রতি সিংড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা কোর্টমাঠে চলনবিল পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পিঠা উৎসবে ১১৭ ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা প্রদর্শিত হয়।

আগে শীতের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের ঘরে ঘরে পৌষ-পার্বণের রকমারি পিঠার আয়োজন করা হতো। দাদি-নানি ও মা-খালারা পরম মমতায় তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের রসালো পিঠা।

বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে হেমন্ত ঋতুর শুরু থেকেই পিঠা তৈরি শুরু হয়। তখন দেশজুড়ে ধানকাটা শুরু হয়। কৃষকের ঘরে ঘরে থাকে গোলাভরা ধান। নতুন সে ধানের আতপ চালে তৈরি হয় পিঠা। এ সময় গ্রামে সন্ধ্যা হলে চাল কোটার শব্দে মুখর হয় চারদিক। রাতভর চলে পিঠা তৈরির কাজ। অনেকে আবার পিঠা তৈরির সময় গীত গেয়ে রাত পার করে। পিঠার অন্যতম উপাদান চালের গুঁড়া হলেও এর সঙ্গে লাগে গুড়, ক্ষীরসহ নানা উপকরণ। এ উপকরণের সঙ্গে শীতের একটা যোগসূত্র আছে। তাই হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত পিঠা তৈরির ধুম পড়ে।

বাংলাদেশে কত রকম পিঠা হয় তা বলে শেষ করা কঠিন। তবে জনপ্রিয় পিঠার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিতই, পাটিসাপটা, লরিপিঠা, ভাপা, আন্দশা, কুশলী, পাতাপিঠা, কাটাপিঠা, ছিটপিঠা, চুটকিপিঠা, মুঠিপিঠা, মেরাপিঠা, হাঁড়িপিঠা, চাপড়িপিঠা, নকশিপিঠা, পুলিপিঠা, জামাইপিঠা, ঝুরিপিঠা ও বিবিয়ানা পিঠা। এসব পিঠার সঙ্গে মিষ্টি বা ঝাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় নতুন পিঠা। যেমন চিতইপিঠার সঙ্গে দুধ-গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় দুধচিতই। চিতইপিঠার সঙ্গে কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা দিয়ে ঝাল পিঠাও তৈরি করা হয়।

খেজুরের রসে তৈরি নানা ধরনের

পিঠা-পায়েস গ্রামবাংলার মানুষের নবান্নের সেরা উপহার। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হতো পাটালিগুড়, মিঠাইসহ নানা ধরনের মজার খাবার।

সিংড়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি চলছে শীতকালীন পিঠার মহোৎসব। পৌর শহরের চাঁদপুর গ্রামের মাহমুদা খাতুন ও জামিলা খাতুনকে তাদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। তারা বলেন, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আগমন উপলক্ষে প্রতি বছর এ পিঠার উৎসব হয়, এটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। তারা আরও বলেন, অতীতে চলনবিলের বাড়ি বাড়ি শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে এ ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।

চলনবিল ফেসবুক সোসাইটির মহাসচিব মাহাবুব আলম বাবু জানান, পিঠা মূলত মুখরোচক খাবার। আগের দিনে বাড়িতে বাড়িতে জামাই-ঝি এলে হরেক রকমের পিঠা উৎসব চলত। এখন রাস্তার মোড়ে জীবিকার তাগিদে পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়। ফেসবুক সোসাইটির রাকিবুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে একান্নবর্তী পরিবার না থাকায় চলনবিলের ঘরে ঘরে সেই ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব অনেকটাই কমে এসেছে। তবু নতুন জামাইয়ের আগমন ও আপ্যায়নে সেই হারানো পিঠা উৎসব আবার ফিরেছে।

তাপস কুমার, নাটোর

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০