Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 11:54 am

চলে গেলেন নায়করাজ রাজ্জাক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি

দীর্ঘদিন শারীরিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই তার জীবনের অবসান ঘটে বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন।

ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় নায়ক রাজ্জাককে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

নায়ক রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে জš§গ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সরস্বতী পূজা চলাকালে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা। তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রডাকশনসের ১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।

পরবর্তী সময়ে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা। তিনি প্রায় ৩০০ বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।

নায়করাজ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গে ঢালিউডে অভিনয় করেছেন। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা। রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। এরপর আরও চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ও ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পান তিনি। এছাড়া একমাত্র অভিনেতা হিসেবে তিনি স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল। রাজ্জাকের উল্লেখযোগ্য ব্যবসাসফল ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রংবাজ’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘যোগাযোগ’সহ অসংখ্য ছবি। রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ছেলে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিতে। নায়করাজের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে।

নায়করাজের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এ কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয়তা অর্জনে নায়করাজ রাজ্জাকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।  রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান প্রজš§ থেকে প্রজš§ স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।  রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী  নায়করাজের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এছাড়া তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তার সহশিল্পীসহ আরও অনেকে।