চসিকের বকেয়া রাজস্ব ৪১৭ কোটি টাকা

# দেড় হাজার সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বকেয়া ২৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর বেসরকারি দুই লাখ সাড়ে তিন হাজার হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বকেয়া রাজস্ব রয়েছে ১৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

সাইদুর রহমান, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আয়ের প্রধান উৎস হোল্ডিং ট্যাক্স অর্থাৎ পৌরকর। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সেবা সংস্থাটি দুই লাখ চার হাজার ৯৫১টি সরকারি ও বেসকারি হোল্ডিং থেকে এ কর আদায় করে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর, বিজ্ঞাপন, শপ সাইন, চলচ্চিত্র ও বিনোদন, যানবাহন, রিকশা-ভ্যান, এস্টেট ও বিবিধ আদায় থেকেও ফি আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়। তবে সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে পৌরকর থেকে। কিন্তু সেবা সংস্থাটির সর্বশেষ হিসাব পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তির কাছে পৌরকর বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪১৭ কোটি ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সেবা সংস্থাটি এক হাজার ৫১৬টি সরকারি ও দুই লাখ তিন হাজার ৪৩৫টি বেসরকারি হোল্ডিং থেকে রাজস্ব আদায় করে। তবে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত এ পৌরকর হলেও নিয়মিত আদায় হচ্ছে না পৌরকর। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ৪১৭ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। আর এসব বকেয়া পৌরকরের মধ্যে বেসরকারি হোল্ডিংয়ের তুলনায় সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বেশি বকেয়া রয়েছে। যদিও বেসকারি হোল্ডিংয়ের তুলনায় সরকারি হোল্ডিং খুবই কম। মাত্র দেড় হাজার সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর বেসরকারি দুই লাখ সাড়ে তিন হাজার হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বকেয়া রাজস্ব রয়েছে ১৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এদিকে গত বাজেট ঘোষণায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বকেয়া পৌরকর পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ সভা করে অনাদায়ী পৌরকর আদায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নগরবাসীকে উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে হলে চসিককে স্বাবলম্বী হতে হবে। যেখানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর আদায়ের হার ৯০ শতাংশের বেশি, সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২১-২২ অর্থবছরে কর আদায়ের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। সঠিকভাবে ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করলে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দাঁড়াবে আনুমানিক চার লাখ। কিন্তু বর্তমানে সিটি করপোরেশনের রেজিস্টার অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা মাত্র ৮৫ হাজার। সব ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা গেলে এ খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি-রপ্তানির ওপর কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বন্দরের আয় থেকে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায়ের লক্ষ্যে ‘স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯’-এ সংশোধনী বিল আনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চসিকের কর্মপরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদার আলোকে ৯ হাজার ৬০৪ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ঠিকাদার ও অন্যান্য বকেয়া বিল বাবদ ১৪৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৬ টাকা, পানির বিল বাবদ তিন কোটি টাকা এবং গ্যাস বিল বাবদ তিন কোটি ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আনুতোষিক বাবদ ১৫ কোটি এক লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর এসব ব্যয় পরিশোধের জন্য পৌরকর আদায়ের পরিমাণ ও হার বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ শেয়ার বিজকে বলেন, চসিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ৪১৭ কোটি টাকা পাওনা থাকলেও চসিকের দেনা রয়েছে ৭৫০ কোটি টাকার বেশি। এসব টাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে (চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নতুন রেটে পৌরকর আদায় শুরু করেছে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ওয়ার্ড থেকে ১৭ শতাংশ (৭% হোল্ডিং + ৭% পরিচ্ছন্ন + ৩% আলো) হারে এবং ১৬ ওয়ার্ড থেকে ১৪ শতাংশ (৭% হোল্ডিং+ ৪% পরিচ্ছন্ন + ৩% আলো) হারে কর আদায় করা হবে।

নতুন হারে কর আদায়ের বিরোধিতা করছে চট্টগ্রাম করতাদা সুরক্ষা পরিষদ। তারা বলছে, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন স্থগিত হয়েছিল। এ বিষয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান কর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বাড়ানো যাবে। ২০১৭ সালে মেয়র নাসিরের আমলে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধিতায় স্থগিত হয়েছিল গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়ানোর প্রস্তাব। এবার সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেছে বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র বলেন, চার বছর আগে গৃহকরের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় নতুন নিয়মে কর আদায়ে আর কোনো বাধা থাকল না।

তবে নগরীর বাসিন্দারা দাবি করেন, নির্বাচনী প্রচারে গৃহকর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তাই ক্ষমতায় এসে গৃহকর চাপিয়ে দেয়াকে বাড়তি বোঝা মনে করছেন তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০