বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় করোনাকালে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সুবাদে চাঁদপুরের কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় কৃষি ব্যাংকের ২৮ শাখার মাধ্যমে কৃষকদের চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে চার শতাংশ সুদে ২০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্য অনুযায়ী এ তহবিল থেকে মাত্র চার শতাংশ সুদে ৭৬২ জন কৃষক ১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণসুবিধা পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ ঋণের মেয়াদ ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস।
চাঁদপুরের অন্য কয়েকটি ব্যাংক এই দায়িত্ব নিলেও তারা কৃষকদের ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংক চাঁদপুর প্রধান শাখা বেশ সফল। জেলায় ৭৬২ জন কৃষকের মধ্যে ১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণসুবিধা দিয়েছে ব্যাংকটি।
গত বছর ১২ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৩ এপ্রিল ২০২০ কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন ও পরিচালনার নীতিমালা জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ে। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কৃষি খাতে এ পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। সে জন্যই কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন নিতে ইচ্ছুক তফসিলি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির মাধ্যমে এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চাঁদপুরের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা দেব নারায়ণ সাহা জানান, ব্যাংকগুলো পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল ও সুদ (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত এক শতাংশ সুদ হারে) পরিশোধ করবে। আর ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়েও ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ঋণ গ্রহণের তারিখ থেকে ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)। ঋণ বিতরণে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্যাংকের মুখ্য কর্মকর্তা মালেক খান জানান, ঋণ বিতরণের খাতগুলো হচ্ছে শস্য ও ফসল খাত ব্যতীত কৃষির অন্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাত যেমন মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত। তবে কোনো একক খাতে ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এছাড়া যে উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠান কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকে তাদেরও এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।
বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে ঋণ বিতরণে অস্বচ্ছতা, অসদুপায় অবলম্বনসহ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন নিয়ে। এতে করে প্রকৃত কৃষকরা অনেক সময় ঋণসুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। প্রকৃত কৃষকরা ঋণসুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে অর্জিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। যদিও কাগজে কলমে ঠিক রয়েছে সবকিছু কিন্তু ঋণ বিতরণে অনিয়মের কারণে বাস্তবতা ভিন্ন অধিকাংশ ঋণ বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক আক্ষেপ করে এমন কথা বলেন।