চাঁদপুরে ইলিশের দেখা নেই দাম নাগালের বাইরে

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ভরা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা নেই। এক কথায় চাঁদপুরে এখন ইলিশের আকাল। চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকায় এ মাছের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। অপরিকল্পিতভাবে নদী ডেজিংয়ের কারণে ইলিশের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিন বড়স্টেশন মাছ ঘাটে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। নামার ইলিশে (হাতিয়া-সন্দ্ব^ীপ) ভরপুর চাঁদপুর মাছঘাট। পদ্মা-মেঘনার কাক্সিক্ষত ইলিশ নেই ঘাটে।

চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার ইলিশের আমদানি তুলনামূলক কম। বাজারে প্রতি কেজি  ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এসব ইলিশ স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার পাশাপাশি ভোলা থেকে এসেছে। আর দাম বেশি হলেও এসব ইলিশ কিনতে ঘাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে দূর-দূরান্তে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিগত বছরগুলোয় এ সময় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মণ ইলিশ আহরণ করলেও, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০০ থকে ৬০০ টাকা মণে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় ইলিশের দাম বেশ চড়া।

মাছঘাটে ইলিশ কিনতে আসা কয়েক জন ক্রেতা জানিযেছেন, ইলিশ কিনতে ঘাটে এসেছি। ভেবেছিলাম এক কেজি ওজনের ইলিশ সর্বোচ্চ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা হবে। কিন্তু এখন এসে দেখি ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানুষের ভিড়ে ইলিশ কিনতে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছি না। তবু আমরা আশা করছি চার থেকে পাঁচ কেজি ইলিশ কিনব।

আড়তদার জানিয়েছেন, ভারতে ইলিশ পাঠানোর তেমন প্রভাব আমাদের এ মাছঘাটে নেই। স্থানীয় ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। নদীতে মাছ নেই ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীতেও ইলিশ না থাকায় আমদানি কম। তাই ক্রেতাদের চাহিদা সামলাতে ইলিশের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার জানিয়েছেন, এক কেজি ওজনের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দাম ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় এ ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা থাকলেও এবার ইলিশের বাজারে আগুন। প্রচুর মানুষ ইলিশ কিনতে ঘাটে আসলেও দিনে ২০০ মণও বিক্রি করা যাচ্ছে না। আমদানি কম থাকায় এ সমস্যা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনলাইনেও ইলিশ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছি। ইলিশ না থাকলে তো দাম বাড়বেই।

চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি জমাদার মানিক জানান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আগামীকাল থেকে শুরু হবে বলে ঘাটে ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। কিন্তু মাছ কম থাকায় চাহিদা বেশি হওয়ায় ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি রাখতে হচ্ছে। চাপ সামলাতে আমরা অনলাইনে ইলিশ বিক্রিও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি। আধা কেজি ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক কেজি বা তার একটু বড় ওজনের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই কেজি ওজনের চেয়ে তেমন একটা বড় ইলিশ ঘাটে নেই। এ সময় তিনি মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সঠিক সময় দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ব্যপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ইলিশের দাম বেশি হতে পারে। মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের তারিখ কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রণালয় সবার সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়া হয়েছে। এটি দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষার বৃহৎ স্বার্থে আমরা বাস্তবায়ন করতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, চাঁদপুরে ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায়োগিক গবেষণাসহ ইলিশ সম্পদ রক্ষায় চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প ছিল। আমরা জেনেছি পদ্মা-মেঘনার পানি দূষণের পাশাপাশি নদীতে ছোট-বড় অসংখ্য ডুবো চর থাকায় ইলিশ চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীতে অবৈধ ডেজিংয়ের কারণে ইলিশের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও ইলিশ নদীতে কম আসছে। এখন নামার যে ইলিশ আসছে তাতে বোঝা যায় সরকারি বিভিন্ন অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদিও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের ভরা মৌসুম।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দেশে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। এত প্রতিবন্ধকতার পরও এ বছর সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছি। তবে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ইলিশের অভয়াশ্রমসহ প্রজনন মৌসুমে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০