বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চাঁদপুরের পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৬২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে। পাঁচ মাসে তিন লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী থেকে পাঠিয়েছেন এ রেমিট্যান্স।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক চলতি বছরের পাঁচ মাসে ২৮,৪৪৬টি বৈদেশিক রেমিট্যান্সের বিপরীতে ১৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ২০,৯২৪টি বৈদেশিক রেমিট্যান্সের বিপরীতে ১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আয় করেছে। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক পাঁচ মাসে ৩০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও কৃষি ব্যাংক ৭,৬০০ বৈদেশিক রেমিট্যান্সের বিপরীতে ৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয় করেছে। এ তালিকায় রয়েছে রূপালী ব্যাংকও।
প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা চাঁদপুরের প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো রেমিট্যান্স জেলার দুই শতাধিক ব্যাংক শাখা ও কয়েকটি শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে। জেলায় প্রবাসীদের নিজ আবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষি, দাতব্য-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নে এ প্রবাসী আয় ব্যয় করা হয়েছে।
চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে, বিশ্বের ১৬২টি দেশে এক কোটি ১৪ লাখ ৬১ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। দেশের অন্য জেলার তুলনায় চাঁদপুরের অবস্থান সপ্তম। বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের বৈধ তিন লাখ ৬৫ হাজার শ্রমজীবী নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাদের স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্য এজেন্সির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়। অবৈধভাবে হুন্ডিতেও আসছে আরও রেমিট্যান্স। তবে এর পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি।
মালয়েশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, লেবানন, জর্ডান ও লিবিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মের সুবাদে অবস্থান করছেন চাঁদপুরের প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারাই এসব রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোয় কর্মরত।
চাঁদপুরের প্রবাসীরা প্রতি মাসে নানা অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে এসব রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক শুধু গোপন একটি পিন নম্বরের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছে। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।
এদিকে চাঁদপুরের উত্তরা, রূপালী, মার্কেন্টাইল, প্রাইম, ডাচ্-বাংলা, সিটি, ন্যাশনাল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ লেনদেন করলেও চাঁদপুরে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় অফিস কুমিল্লায় এবং বিকাশ লেনদেনে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্সে দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের সব শাখায় বৈদেশিক রেমিট্যান্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা দিতে খোলা হয়েছে। ব্যাংক শাখা এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে। এ কারণে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ তুলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না দেশে থাকা পরিবারসহ স্বজনদের। প্রবাসীরা টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যাংক তার গ্রাহককে কাক্সিক্ষত অঙ্কের টাকা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত নানা অর্থলগ্নি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে ওই অর্থ পাঠান।
চাঁদপুরের সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘প্রবাসীরা যাতে বৈধভাবে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠান, সেজন্যই সরকার দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে।’
এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক গীতা রানী জানান, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে তাদের অবস্থার উন্নতি ছাড়াও রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে। সরকার তাদের এ রেমিট্যান্সের জন্যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে।