বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর : জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের ফলে সমন্বয় করে নৌযানের যাত্রী ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয় ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোয়। লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন পেয়ে লঞ্চ মালিকরা যারপরনাই খুশি হলেও বাড়তি ভাড়া নেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নি¤œ আয়ের যাত্রীরা। ফলে ক্রমেই লঞ্চের মালিকপক্ষ আর যাত্রীদের মধ্যে বাড়তে থাকে অসন্তোষ। প্রতিনিয়তই লঞ্চের স্টাফদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রী অসন্তোষের কারণে আগের তুলনায় লঞ্চের যাত্রীসংখ্যাও তুলনামূলক কমে গেছে। চাঁদপুর লঞ্চঘাটে সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। চাঁদপুর-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ২৪টি বিলাসবহুল লঞ্চ এবং চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ১৪টি এবং দক্ষিণাঞ্চল ও শরীয়তপুরের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল করছে। এসব এলাকার লোকজন ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের নৌরুটে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো নোটিশ কিংবা ঘোষণা পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদপুর থেকে ঢাকার সাধারণ (ডেকের) ভাড়া পূর্বে ছিল ১০০ টাকা। কভিডকালে ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৫০ টাকা। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে এ ভাড়া ২০০ টাকা করা হয়েছে।
ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে চলাচলকারী ফ্লাইং বার্ডস করপোরেশনের ময়ূর-৭ লঞ্চে ১৭ আগস্টের একটি টিকিটে ১০০ টাকার নির্ধারিত ভাড়ার স্থলে ২০০ টাকার সিল বসিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নিচতলার চেয়ার সিটের ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, এসি প্রথম শ্রেণির চেয়ার ৩৫০ টাকা থেকে এখন ৪০০ টাকা করা হয়। পূর্বে সিঙ্গেল এসি কেবিনের ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। দুই দফা ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (নৌরুট, পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৯-এর বিধি ২৭ মোতাবেক সরকার নৌযানে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ যাত্রী ভাড়া পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে। এতে প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারের জনপ্রতি যাত্রী ভাড়া ২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩ টাকা নির্ধারণ করে। ১০০ কিলোমিটার অধিক দূরত্বের জন্য জনপ্রতি কিলোমিটার হিসেবে যাত্রী ভাড়া ২ টাকা থেকে ২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে। এতে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদপুরে যাতায়াতকারী বিভিন্ন লঞ্চ মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করার দিনের পর দিন যাত্রী অসন্তোষ বাড়ছে।
ঢাকাগামী যাত্রী কচুয়ার ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ (৫০) জানান, তিনি ভোর ৬টা চাঁদপুর ঘাটে আল বোরাক লঞ্চে ওঠেন। তিন তলায় প্রথম শ্রেণির চেয়ার টিকিট ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। আগে এ ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা ছিল। হাজীগঞ্জের আরেক যাত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি যে হারে বেড়েছে, লঞ্চ-মালিকরা তার থেকে দেড়গুণ ভাড়া বাড়িয়েছে। আমরা যাত্রীরা সবসময় ভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি। নানা ছুতোয় ভাড়া বাড়ানো হয়। অথচ আমাদের আয় বাড়ছে না।
অন্যদিকে ভাড়া বাড়ানোর ফলে ঢাকায় চাকরি করা স্বল্প বেতনের মানুষ, চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ লঞ্চের অতিরিক্ত ভাড়ায় বিপাকে পড়েছেন। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারের কাছে ভাড়া কমানোর দাবি জানান এসব ভুক্তভোগী নি¤œ আয়ের মানুষ।
বিআইডব্লিউটিএ’র চাঁদপুর নদীবন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। প্রথম ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার ফলে এখন ২.৩০ টাকার সঙ্গে ৭০ পয়সা যোগ হয়ে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা। চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে আগে ডেকের ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। এখন ৫০ (৩০ শতাংশ) টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা।