বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন রুটে লঞ্চের ভাড়া বেড়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৬০ পয়সা ভাড়া বাড়লেও যাত্রীদের কাছ থেকে তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা-চাঁদপুর যাত্রীপ্রতি ১৮০ টাকার ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকা। এছাড়া সিঙ্গেল ক্যাবিনে ১০০ ও ডবল ক্যাবিনের ভাড়া বেড়েছে ২০০ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন লঞ্চে যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
গত বুধবার চাঁদপুর লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকাগামী লঞ্চে ওঠার পর টিকিট করার সময় বাড়তি ভাড়া চাইছে কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে লঞ্চের স্টাফদের। সোনার তরী-৪ লঞ্চে একই দিন টিকিটের ওপর সিল মেরে ১১৫ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা, নন-এসি সিঙ্গেল ক্যাবিনে ৫০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা ও ডবল ক্যাবিনে এক হাজার টাকার পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে এক হাজার ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ৭৯৩৩ নম্বর টিকিটে যাতায়াতকারী যাত্রী এমন অভিযোগ করেন।
আবে জম জম লঞ্চের সুপারভাইজার বিপ্লব সরকার বলেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চের খরচ বেড়ে গেছে, সে কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ডেকের ভাড়া ১১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০, নিচের চেয়ার ১৮০ থেকে বেড়ে ২২০, নন-এসি সিঙ্গেল ক্যাবিন ৫০০ থেকে বেড়ে ৬০০, ডাবল ক্যাবিন এক হাজার থেকে বেড়ে এক হাজার ২০০, এসি সিঙ্গেল ক্যাবিন ৭০০ ও ডাবল ক্যাবিন এক হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। এছাড়া ভিআইপি ক্যাবিনের ভাড়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা।
বিপ্লব সরকার বলেন, ভাড়া বাড়ানোর কারণে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। তারা বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি মানতে চাচ্ছেন না। আগের চেয়ে যাত্রীও কিছুটা কম।
ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দারোয়ানের চাকরি করি। আগে লঞ্চের ডেকে বসে ১০০ টাকা দিয়ে যেতাম। কিন্তু এখন দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। এভাবে যদি সবকিছু বাড়ে, তাহলে আমরা চলব কীভাবে? আমাদের কথা কেউ ভাবে না।’
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতাম। লঞ্চে সাধারণ আসনে বসলে ভাড়া লাগত ১৮০ টাকা। আজ ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটলাম ২২০ টাকা দিয়ে। এখন আর প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতে পারব না।’
ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘সিঙ্গেল ক্যাবিনের ভাড়া ১০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। সরকার প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা করে লঞ্চভাড়া বাড়িয়েছে। ঢাকা-চাঁদপুর রুটের দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার হলে সে হিসেবে ভাড়া বাড়ার কথা ৩৭ টাকা।’
মানবাধিকার কর্মী কামরুন নাহার নয়ন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে লঞ্চের স্টাফরা। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া যা বেড়েছে, সে হারে ভাড়া আদায় না করলে তো বাকবিতণ্ডা হবেই। এসব দেখার কেউ কি আছে?
চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা কায়সারুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, কিলোমিটারপ্রতি লঞ্চের ভাড়া ৬০ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা থেকে নদীপথে চাঁদপুরের দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। আগে ডেকের নির্ধারিত ভাড়া ছিল ১১৬ টাকা। লঞ্চগুলো সাধারণ সময় ১০০ আর ঈদের সময় ১২০ টাকা নিত। এখন ১১৬ টাকার সঙ্গে বর্ধিত ভাড়া নিলে যাত্রীদের কাছে মনে হবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আগে ছিল ১৭০ পয়সা। এখন বেড়েছে ৬০ পয়সা। সে হিসাবে বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দুই টাকা ৩০ পয়সা। এই ভাড়ার পরিমাণ ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে।
বিআইডব্লিটিএর এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা লঞ্চগুলোয় মনিটর করছি। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।