নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের চেষ্টা হয়েছিল। জেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। জমির দাম বাড়িয়ে ১৩৯টি দলিল বানিয়ে কারসাজি করে এ বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করে একটি চক্র, যার নেতৃত্বে ছিলেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে। গতকাল বিকালে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দুদক সচিব বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এপ্রিলের শুরুর দিকে চাঁদপুরে অভিযান পরিচালনা করে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়। এর মাধ্যমে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনে জমির দামে ফারাকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের কেউ এতে জড়িত কি নাÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের নাম চলে আসবে। এখানে গোপন করার কিছু নেই। তদন্তে উদঘাটিত হবে কারা জড়িত।’
সম্প্রতি প্রস্তাবিত চাঁবিপ্রবি জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দাবি করেন, চাঁবিপ্রবি নির্মাণের প্রস্তাবিত এলাকায় আমি বা আমার পরিবারের কারও কোনো জমি নেই। তাই অধিগ্রহণের সময় বেশি মূল্যে জমি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ-এর নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। জানা গেছে, অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।
দুদক টিম, ডিসি কার্যালয়, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে অভিযোগ সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। টিমের সংগৃহীত রেকর্ডপত্রে চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদী অংশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতি-পরিবেশ বিনষ্টসহ রাজস্ব ক্ষতি এবং প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকারের বিরাট অঙ্কের অর্থ লুটপাটের দুরভিসন্ধি সম্পর্কে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক জানায়।