Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:10 am

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগানের নির্মাণাধীন স্কুল ভবন ভাঙচুর

[খেলার মাঠ নষ্ট হওয়ার অভিযোগে এই ভাঙচুর] [ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয়েছে নির্মাণাধীন ভবন]

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। চা শ্রমিক শিশুদের জন্য নির্মিত সেমিপাকা স্কুল ঘরটি ভাঙচুর করায় দুই শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীর স্কুল জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ২ অক্টোবর এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঐ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজমান রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের চারপাশে ইট-বালুসহ নানা সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নতুন নির্মাণাধীন প্রতিটি দেয়াল ভাঙা। দেখতেই বুঝা যাচ্ছে স্কুল ভবনে চলেছে তাণ্ডব। স্কুলে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। চারদিকে সুনসান নীরবতা। কোন হইহুল্লোড় নাই। খেলাধুলার মাঠেও কোন খেলাধুলার দৃশ্য চোখে পড়েনি।’

জানা যায়, ‘চাঁদপুর-বেলগাঁও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের জীবনমান উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত ২০০৯ সালে চা বাগানের নিজস্ব জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুলটিতে পড়ালেখার মনোরম পরিবেশ না থাকায় কর্তৃপক্ষ নতুন করে সেমিপাকা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হলে খেলার মাঠ নষ্ট হওয়ার অভিযোগে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে নির্মাণকৃত ভবনটি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ ঘটনায় স্থানীয় আ. লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার নাম ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে।’

চা শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের সন্তানরা দুরে কোথাও গিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না৷ কারণ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দূরে। চা শ্রমিকদের অনুরোধে ২০০৯ সালে চাঁদপুর-বেলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বাঁশের ভেড়া টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি স্কুল ঘরটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ নতুন করে একটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এরপর ভবনের চারপাশের দেয়াল ৩ ফিট পরিমাণ উঠার পর হঠাৎ কিছু স্থানীয় বখাটে স্কুল ভবনের জায়গাটি তাদের খেলার মাঠ বলে দাবি করে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে নির্মাণকৃত ভবনটি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমাদের সন্তানদের স্কুল জীবন। এ ঘটনায় আমরা দোষীদের শাস্তি কামনা করি।’

স্থানীয়রা জানান, ’বিদ্যালয়ের পাশে খেলাধুলার জন্য বিশাল মাঠ রয়েছে। এরপরও কিছ দুষ্কৃতকারী এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য স্কুল ভবনটি খেলাধুলার মাঠ দাবি করে চা বাগানের নতুন স্কুল ভবনটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনা স্থানীয়দের জন্য চরম লজ্জাজনক। আশা করি প্রশাসন এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্থানীয়রা এই মাঠে খেলাধুলা করে আসছিলো। উপজেলা প্রশাসন গত বছর এই মাঠটি ইউনিয়নের মিনি স্টেডিয়াম ঘোষণা করেন। কিন্তু হটাৎ চা-বাগান কর্তৃপক্ষ মাঠে এসে স্কুল ভবন নির্মাণ করাতে স্থানীয় ছাত্র-জনতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেছে বলে শুনেছি।’

পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দীন বলেন, ‘চা বাগানের স্কুল ভবন ভাঙচুর করার বিষয়ে শুনেছি। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এরপর চা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান ম্যানেজার আবুল বাশার বলেন, ‘চা-শ্রমিক সন্তানদের জীবনমান উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চা-শ্রমিক সন্তানদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলা সকলের মানবিক দায়িত্ব। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।’

বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় একটি জিড়ি করেছেন। রামদাশ মুন্সির হাট তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে এখন থেকে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবেন।