Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:09 am

চাঁদপুর মুক্ত দিবস আজ

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল চাঁদপুর। লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমায় সর্বশেষ যুদ্ধ হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর।

মিত্রবাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সড়কপথে হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালান। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে চাঁদপুর থেকে পালায়।

হাজীগঞ্জে ৩৬ ঘণ্টা ও বড় স্টেশন এলাকায় তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত হয়। চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এ সময় চাঁদপুরের পুরানবাজার এলাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ চৌধুরী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চুন্নু জানান, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। ৮ এপ্রিল ১৯৭১ বিকালে প্রায় ৮০০ পাকিস্তানি সেনার একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে।

ওই দিন রাতে চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলা দেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে কয়েক জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ভোরে শহরে প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল খান ভলান্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মেরে মেঘনায় ফেলে দিত। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা চাঁদপুরসহ আশেপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করে বড় স্টেশন এলাকায় মেঘনায় ফেলেছে। জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ ডিসি কার্যালয়ের সামনে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। হাজীগঞ্জ নাসিরকোর্টেও ১১ শহীদের কবরসহ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ২০১৩ সালে মোলহেড এলাকায় চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয় রক্তধারা। তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ অঙ্গীকার। ১৯৯২ সাল থেকে চাঁদপুরে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পাশাপাশি চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।