নিজস্ব প্রতিবেদক: গরু আমদানিতে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধসহ নানাবিধ দাবি বাস্তবায়ন হলে মাত্র ৩০০ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আমদানি করতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্নমুখী বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তাতে গরু আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়। তাই আমদানি-বিড়ম্বনাসহ মাংস ব্যবসার যাবতীয় সমস্যা দূর করা হলে ব্যবসায়ীরা ৩০০ টাকার চেয়েও কম দামে নগরবাসীকে মাংস খাওয়াতে পারবেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল বারেক, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে রবিউল আলম চাঁদাবাজি বন্ধ ও গরু আমদানির বাধা দূর করাসহ নানাবিধ দাবি তুলে ধরে বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের এ দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হলে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকা হবে। মানা হলে ধর্মঘটের আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে আমি আশা করছি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে এবং ধর্মঘট আর আমাদের করা লাগবে না।
সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো হলোÑঅতিরিক্ত খাজনা আদায়ের জন্য গাবতলী হাটে ইজারাদারদের ইজারা বাতিল করা, হুন্ডির মাধ্যমে গরু ব্যবসার নামে ভারতে গরু পাচার বন্ধ করা, হুন্ডি ব্যবসায়ী ‘কালা মইজা’কে বিচারের আওতায় আনা, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো দ্রুত অপসারণ ও চামড়ার পড়তি দাম বাড়ানো, উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ প্রধান নির্বাহী ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে অপসারণসহ আইনের আওতায় আনা এবং ট্যানারি শিল্পমালিকদের দুই ভাগে ভাগ করে সফল ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ও ব্যর্থ মালিকদের কারখানা বন্ধ করা।
সম্মেলনে ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে দাবি করে রবিউল আলম বলেন, গরুর চামড়া এক সময় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেত। সেই চামড়া এখন দুই থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি করতে হয়। ছাগলের চামড়া এক সময় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। তা এখন ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
রোববার পশু জবাই বন্ধ থাকে। সেদিনও পশু জবাই হবে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল আলম বলেন, ‘তা জানি না। আমাদের শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘট ছিল, তা পালন করেছি। শনিবারের পর থেকে আমাদের ধর্মঘট স্থগিত থাকবে, প্রত্যাহার হবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিটিং আছে রোববারে। রোববার শহরে গরু জবাই হবে।’
সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে রবিউল আলম বলেন, দাবি মানা এক জিনিস আর বাস্তবায়ন আরেক জিনিস। বাস্তবায়ন যদি করে তো একটু সময় লাগবে। যদি গরু আমদানি ওইভাবে বাস্তবায়ন করে আনা হয়, তাহলে ৩০০ টাকার কমেও মাংস খাওয়ানো সম্ভব।
প্রসঙ্গত, মাত্র এক বছর আগেও রাজধানীতে প্রতি কেজি গরুর মাংস কেনা যেতো ৪০০ টাকায়। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই এর দাম ৫০০ টাকা ছুঁই-ছুঁই করছে।এ জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও গাবতলী পশুর হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মহানগর মাংস বিক্রেতা সমিতির অভিযোগ, আট মাস ধরে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত খাজনার চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করছে গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদার। প্রতিটি গরুর জন্য বাড়তি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। তাই মাংসের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই ব্যবসায়ীদের।
ইজারাদারদের পাল্টা অভিযোগ, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাংস ব্যবসায়ীদের গরুপ্রতি ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাজনা পশুর দামের শতকরা সাড়ে তিন টাকা। এ সুযোগের অপব্যবহার করে মাংস ব্যবসায়ীরা হাট থেকে পশু কিনে হাটের বাইরে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে খাজনার টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে ইজারাদারের।
মাংস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সীমান্ত থেকে গাবতলী পর্যন্ত একটি গরু আনতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। পরে গাবতলীতে আদায় করা হয় অতিরিক্ত খাজনা। এতেই মাংসের দাম দিনে দিনে বাড়ছে। এভাবে অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধ হলে বর্তমান মূল্যের চেয়ে আরও কম টাকায় মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে।
ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এখন রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানে গরু জবাই কমে গেছে। দাম বাড়ায় ক্রেতাদের কাছে মাংসের চাহিদাও কমে গেছে। ট্যানারিগুলো চামড়া না নেওয়ায় চামড়ার দামও কমে গেছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় তাদের সমিতির সদস্যসংখ্যা আট হাজারের বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাউল ইসলাম ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইজারাদাররা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন।

Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:06 pm
চাঁদাবাজি না হলে ৩০০ টাকায় মিলবে মাংস
পত্রিকা,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: