Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:04 am

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে পেটালেন মেয়র

প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় বহিষ্কৃত দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাতে শহরের ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত আরাফাত বোর্ডিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। মেয়র কর্তৃক লাঞ্ছিতের শিকার ওই শিক্ষক জেলা শহরের রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের দপ্তর সম্পাদক সামিউল ইসলাম।

জানা গেছে, এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করার অপরাধে দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করে রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার এসএসসি-টেস্ট পরীক্ষায় ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় মোবাইল দেখে নকল করছিল ওই দুই ছাত্র। পরে ধরা পড়লে শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা করে ওই দুই ছাত্রকে নিয়মানুযায়ী বহিষ্কার করা হয়।

তবে এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহরের জন্য তদবির করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় বিদ্যায়লটির প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে মারধর করেন মেয়রের লোকজন। মেয়র বাহিনীর হামলায় আহত হন প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম।

প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম অভিযোগ করেন বহিষ্কৃত ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবার মেয়রের কাছে তাদের সন্তানদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করে। পৌর মেয়রের নির্দেশে ৮নং ওর্য়াড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম ও ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামশুল হক মোবাইল ফোনে আমার কাছে অনুরোধ করেন এবং ওই দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করেন।

শনিবার পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান আমাকে ফোন করে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি তাকে বলিÑএটা করলে নিয়ম লঙ্ঘন হবে। তবে আপনি যখন বলছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টা দেখব। সে সময় মেয়র আমাকে উত্তেজিত হয়ে বলেনÑ আমি কে বলছি, এটা কি জানেন। আমি যা বলছি, আপনি তা-ই করবেন। আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? জানতে চাইলে মেয়র আমাকে তার পার্কে ডাকেন। আমি যেতে না চাইলে; আমি কোথায় আছি জানতে চান। এ সময় আমি আরাফাত বোর্ডিংয়ে আছি বলে জানায়।

কিছুক্ষণ পরে রাত ১১টার দিকে সেখানে দলবল নিয়ে চলে আসেন মেয়র। মেয়রের সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে মারধর শুরু করেন। মেয়রও উত্তেজিত হয়ে আমাকে আঘাত করেন। সে সময় আমি ভয়ে দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার কথা বলেছি। তারপরও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে কাল থেকে স্কুলে যাবি না বলে হুমকি দেন। আমি এখনও চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, এ ঘটনায় তিনি এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও; তিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান বাবুকে জানিয়েছেন। আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

তবে শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান। তিনি জানান, কেউ অভিযোগ করলেই তো সত্য হয়ে যায় না। এমন ঘটনায় আমি জড়িত নই।

এদিকে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বাউবি’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী শামসুজ্জামান বাবু জানান, প্রধান শিক্ষক মারধরের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। দাপ্তরিক কাজে ঢাকা থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি। তবে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।