চাকরিতে কোটা যেন মরণফাঁদ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সর্বনাশা’ শীর্ষক কবিতা ছড়িয়ে পড়েছে। কবিতাটির কয়েকটি পঙক্তি হলো ‘-কৃষকের ছেলে কৃষক হবে/ জেলের ছেলে জেলে। কষ্ট করে কেন মাগো আমায়-দিয়েছিলে স্কুলে? আমার হাতে কলম দিয়ে, তুমি নিলে সংসারের ভার। তোমার কষ্ট ঘুচাব, সে সাধ্য আছে নাকি আমার? কবিতাটি বেশ নজর কেড়েছে গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলের পর থেকেই। রাত যায় দিন আসে এভাবে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনের মাহেন্দ্রক্ষণের উপস্থিতি ঘটে চলতি মাসের ১৪ তারিখে।

বাকি চাকরিপ্রার্থীরা ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে তাকিয়ে রয়েছিল, আর মনে মনে ভাবছিল এবার বুঝি চাকরিটা হবে! এবার হয়তো অসুস্থ বাবাকে আর অন্যের কাজ করতে দেবে না এবং নিজের পয়সা দিয়ে ওষুধ কিনে দিতে পারবে। বয়স্ক মাকে আর রান্নার কাজ করতে দেবে না। চাকরি পেলে একটা বউ করে মায়ের পাশে রাখবে। মায়ের যতœ নিবে, ছোট্ট ভাইয়ের কলেজের ড্রেস পরিষ্কার করে দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি স্বপ্ন ছিল অনেকের। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হেরে গেছে কোটা নামক অভিশাপের ফলে। দুমড়ে মুচড়ে গেছে তাদের অধিকাংশ স্বপ্ন। লালিত স্বপ্ন ভেস্তে গেছে কোটা নামক ব্যাধির নিমিত্তে।

যেখানে ছেলে চাকরিপ্রার্থীরা ৬০ কিংবা ৬৫ নাম্বার পেয়েও চাকরি পায়নি সেখানে মেয়েরা ৪২ থেকে ৪৫ পেয়েই শিক্ষিকা হচ্ছেন। একই সাবজেক্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে একটা মেয়ে বিশেষ সুবিধা পেয়ে চাকরি জীবন উপভোগ করে, অন্যদিকে ছেলেটা তার জীবন নিয়ে বেশ চিন্তিত, হতাশ ও বিষন্ন। ছেলে প্রার্থীর ক্ষেত্রে এত বৈষম্য কেন? কেন তারা এত উপেক্ষিত? সরকার নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমাজে তাদের অবাধ বিচরণে কাজ করছে কিন্তু এমন বৈষম্য করে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কতটা যৌক্তিক? অনেকেই বলতেছেন বিশেষ সুবিধা দিয়ে নারীদের সামনে অগ্রসর করা এটা যৌক্তিক নয় বরং অসম্মানের। ৬০% কোটা থাকায় যোগ্যতা থাকা না সত্ত্বেও বা তুলনামূলকভাবে কম নাম্বার পেয়েও চাকরি জীবন পার করছে।

মেয়েটা চাকরি পাওয়ার পর কখনোই বেকার যুবককে বিয়ে করবে না। নিজেই সরকারি চাকরিজীবী এবং তার মতো আর একটা সোনার হরিণকে খুঁজবে এবং শেষমেশ বিয়ে করবে। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছেলেটা আজ বেকার। নিয়মের বেড়াজালে সে আটক। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারকে সাহায্য করতে পারে না। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সেক্ষেত্রে পরিবারসহ যাবতীয় কিছু একটা ছেলের ওপরেই নির্ভর করে। তাই মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের চাকরির গুরুত্ব অনেক বেশি কিংবা প্রয়োজনও বটে। চাকরিবিহীন ছেলেকে কোনো মেয়ে বিয়েও করতে চায় না।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মেয়ে কোটার পাশাপাশি রয়েছে ২০% পোষ্য কোটা এবং এছাড়া রয়েছে বিজ্ঞান কোটা।  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ যেন কোটারেই জয়জয়কার। কোটাবিহীন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষার্থীর প্রাইমারি শিক্ষক হওয়া যেন আকাশ কুসুম কল্পনা করা। এত কোটার ভিড়ে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণ অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। কোটা নিয়ে এর আগেও অনেক আন্দোলন হয়েছে কিন্তু তেমন কাজের প্রতিফলন ঘটেনি। কোটা থাকবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন মন ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে সেটা লক্ষ্য রাখা জরুরি। যোগ্যদের আলোয় আলোকিত হোক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো, শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করুক তাদের প্রকৃত গুরুদের কাছ থেকে। যোগ্য প্রার্থীদের মাধ্যমে পুরো ভুবনে আলোর ফুলঝুরি ফুটুক।

মো. মমিনুর রহমান

শিক্ষার্থী

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০