চাকরিতে নয়, মাছ চাষে বদলেছে জীবন

যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধাবিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
‘মাঠ চাষে দিলে মন, চাকরি খোঁজার নেই প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সেøাগানকে আপ্তবাক্য হিসেবে মেনে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে মশিউর রহমান (৩২) পড়ালেখার পাশাপাশি মাছ চাষ বেছে নেন। ২০০০ সালে শুরু হয় তার মাছের ব্যবসা। এরই মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘খালাশপীর অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লি.’। নাম লিখিয়েছেন কোটিপতির ঘরে। শুধু তা-ই নয়, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় রেণু পোনা উৎপাদনে তার প্রতিষ্ঠান সেরার তকমা পেয়েছে। এখন তার অধীনে ২৪ জন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে।
উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের ঠাকুরদাস লক্ষ্মীপুরের মোস্তাফিজার রহমান মণ্ডল মানিকের ছেলে মশিউর। তার পুকুরগুলো টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০০ সালে মশিউর রহমান এসএসসি পাসের পর পার্শ্ববর্তী টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর পড়ালেখাও চালিয়েও যান। এভাবে চারটি পুকুরের মালিক হন। ২০০৫ সালে ‘খালাশপীর অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লি.’ নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেণু পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০১৬ সালে রেণু পোনা উৎপাদনে উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মৎস্য বিভাগ তাকে পুরস্কৃত করে।
২০০৮ সালে তিনি বিবিএ পাস করেন। পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাছ চাষের ওপর একাধিক প্রশিক্ষণ নেন। আদর্শ মৎস্যচাষি হিসেবে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। সময়, শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে তিনি আজ সফল।
মশিউরের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেকে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার মৎস্য খামারে ১৯ থেকে ২০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। অন্যান্য মাছচাষিদের চেয়ে চার গুণ বেশি মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। তিনি জানিয়েছেন, নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দরকার সূর্যের পর্যাপ্ত আলো, পানির ঢেউ, বড় আকারের পোনা মজুদ, আংশিক মাছ আহরণ, মজুদসহ পানির আংশিক পরিবর্তন।
মশিউর বলেন, শৈশব থেকেই মাছ চাষে আগ্রহী ছিলাম। এজন্য এসএসসি পাসের পর নিজেদের পুকুরে মাছ উৎপাদন শুরু করি। প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ বেশি হয়েছিল। এখন লাভের মুখ দেখছি। রেণু পোনায় লাভ বেশি। আমার প্রায় ৪২ একর জমির ১৩টি পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, বিলুপ্তপ্রায় গুজিয়া, চিতল ও বাঘাইড় ছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ রয়েছে। পুকুরের পাড়গুলোতেও ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগিয়েছি।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বলেন, রেণু পোনা উৎপাদনে মশিউরের প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে উপজেলায় সফল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার মতো শিক্ষিত যুবকরা মাছ চাষে এগিয়ে এলে দেশে আমিষের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

মো. আকতারুজ্জামান রানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০