শেয়ার বিজ ডেস্ক: শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই শুধুমাত্র পাস করেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হতে হবে এবং অন্যকে চাকরি দেওয়া সুযোগ তৈরি করতে হবে।’
আজ রোববার (৫ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তরুণ সমাজকে শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংয়েরও সুযোগ করে দিয়েছি। পাশপাশি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে সব রকম ব্যবসা বাণিজ্য যাতে করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যুব সমাজের কল্যানে স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম নিচ্ছে এবং এ জন্য বাজেটে আলাদা টাকাও বরাদ্দ আছে। কাজেই উদ্যোক্তা হতে চাইলে যে কেউ হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ব্রডব্যান্ড সুবিধা প্রায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে পৌঁছে গিয়েছে।
ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগ খুব সহজ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রয় বিক্রয়, পণ্যমান সবকিছু জানার একটা সুযোগ হচ্ছে। বাজার সম্পর্কে জানার সুযোগ হচ্ছে। বাজারের চাহিদা ও পণ্যের মূল্য সম্পর্কে জানার সুযোগ হচ্ছে। এই সুবিধাগুলো কিন্তু এখন চলে এসেছে। যার ফলে আমি মনে করি আমাদের মানুষের আর কষ্ট করার কোন অর্থ হয় না। একটু স্ব-উদ্যোগে কাজ করলেই কিন্তু নিজেরা উদ্যোক্তা হতে পারেন এবং নিজেরা কাজ করতে পারেন।
মারাত্মক করোনাভাইরাস আক্রমণের কারণে ১৯ মাস বিরতির পর এসএমই ফাউন্ডেশন এই মেলার আয়োজন করেছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে শেষ এসএমই মেলার আয়োজন করেছিল যখন দেশে করোনভাইরাস সংক্রমণের প্রথম কয়েকটি কেস সনাক্ত হওয়ার পরে দ্রুত গুটিয়ে যায়।
১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলমান এই মেলায় প্রথমবারের মতো ১০টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ৩শ’ এসএমই প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, যাদের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশেষ অতিথি এবং অনুষ্ঠানে সভাপতি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জাতীয় এসএমই পুরস্কার ২০২১ বিজয়ী চার উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন।
বিশেষ অতিথি এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমান বক্তৃতা করেন।
আমাদের দেশে কাঁচামালের সহজলভ্যতা রয়েছে, সেই বিবেচনাতেও দেশে শিল্প গড়ে উঠতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে করে আমার নিজের দেশে যেমন বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে সেইসাথে বিদেশেও আমরা রপ্তানী করতে পারবো, আমাদের রপ্তানী পণ্য বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য আমাদের পণ্যগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০৯ সাল থেকে ক্রেডিট হোলসেলিং প্রোগ্রামের আওতায় ম্যানুফেকচারিং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট এসএমই উদ্যোক্তা গ্রুপ, ক্লাস্টার এবং বিভিন্ন সাব-সেক্টরের উদ্যোক্তাদের অনুকূলে সহজ শর্তে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের এ স্কিমে আদায়ের হার প্রায় একশ’ ভাগ। অত্যন্ত সফল বিবেচনায় ক্রেডিট হোলসেলিং প্রোগ্রামের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশন যাতে আরও বেশি ঋণ দিতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিতে চাই।
তিনি বলেন, তিনি এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এখানে ঋণ প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে চলতি মূলধন ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকায় ঋণদান কার্যক্রম সম্প্রসারণে আরও ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, কেউ যদি উদ্যোক্তা হয় তবে সে কোথায় কারখানা করবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিন। নিজস্ব জায়গায় করলে, সেখানে কীভাবে বর্জ্যব্যবস্থাপনা করবে সেটা ভালোভাবে দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে সারাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে। ক্লাস্টারসহ সারা দেশে রয়েছে ৭৮ লাখ এসএমই শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নতুন করে একজন মানুষের কাজের ব্যবস্থা হলেও কমপক্ষে ৭৮ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী ।
নারীরা এক সময় একটু পিছিয়ে থাকতো এবং তাদের মাঝে তেমন উদ্যোক্তা ছিল না, আজকে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের নিজেদের স্ত্রীদেরকেও উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যাবার জন্য সহায়তা প্রদানের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার প্রদানসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি আশা করি সামনের দিকে আরো বেশি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
পুরুষ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারাও ব্যবসা করেন। আপনাদের স্ত্রীর নামে যদি আপনারা এই এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে তাকেও একটু কাজ করার সুযোগ করে দেন তাহলে মেয়েরাও কিন্তু সেই ধরনের শিল্পায়নও করতে পারবে। তাতে উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগটা অন্তত আপনারা দেবেন। সেখানে বাঁধা দেবেন না।
তথ্যসূত্র: বাসস।