Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:42 am

চাঙা পুঁজিবাজার: বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দুর্বল কোম্পানিতে 

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দৃশ্যমান। চাঙা এ বাজারে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর ধারবাহিকভাবে বাড়ছে। সেই তুলনায় পিছিয়ে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্বল কোম্পানির আধিপত্য লক্ষ করা যাচ্ছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল এসব কোম্পানি। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির তালিকায় উঠে এসেছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৯ কোম্পানির নাম। যেটাকে অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দুর্বল কোম্পানির অকারণে দরবৃদ্ধি বাজারের জন্য অশুভ সংকেত।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত সপ্তাহে দরবৃদ্ধির (বি, এন ও জেড ক্যাটাগরি) শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে অলটেক্স, বিডি অটোকারস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, শাইনপুকুর সিরামিক, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, আরএন স্পিনিং, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইমাম বাটন ও সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ লিমিটেড। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ এ সময়ের মধ্যে এ ক্যাটাগরির শেয়ারের দর বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দেখা গেছে এসব কোম্পানির নাম।

কোম্পানিগুলো সবই বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ফলে মৌলভিত্তির বিচারে এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির বিষয়টি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন সবাই। বিষয়টি নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের। ইতোমধ্যে এসব কোম্পানিকে দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে ডিএসই। যদিও কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের শেয়ারের দরবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ফিরে আসছেন, এটা ভালো খবর। তবে তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন কোনো ধরনের ভুল না করেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে এখন অনেক ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দর ক্রয়যোগ্য রয়েছে। দুর্বল কোম্পানিতে না ঝুঁকে তারা যদি এসব কোম্পানি দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে ভালো ফল আশা করতে পারবেন।

সম্প্রতি দুর্বল সাত কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। এরপরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির ঝলক থেমে নেই। আর কোনো কিছু না বুঝেই এসব শেয়ারে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের এ মনোভাবকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এসব কোম্পানি নিয়ে মন্তব্য চাইলে ডিএসইর এ সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সুযোগসন্ধানীরা ওত পেতে থাকে। এ সময় অনেকই তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চান। কথাটি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখা উচিত। কারণ পুঁজি যার, নিরাপদ রাখার দায়িত্বও তার।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে সচেতন হেেয়ছে। ফলে তাদের উচিত হবে না অন্য কারো কথায় বা গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করা। ইনভেস্ট করার আগে তাদেরই ঠিক করতে হবে, তিনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে সেটা ঝুঁকিমুক্ত কি না। সিদ্ধান্ত ভুল হলে এর মাশুল তাকেই দিতে হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।