Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:16 am

চামড়া খাতে ঋণ দিতে অনীহা সাড়ে ১২ শতাংশই খেলাপি

জয়নাল আবেদিন: দীর্ঘদিন থেকে দেশের ট্যানারি শিল্পের বেহাল দশা। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। দ্রুতই খেলাপি হয়ে যাচ্ছে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ। অন্যদিকে খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছর নীতি সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বছরও দেয়া হয়েছে। ঋণের দুই শতাংশ জমা দিয়ে পুনঃতফসিল করতে পারবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। আবেদন করতে পারবেন নতুন ঋণের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চামড়া খাতে ১২ হাজার ২৬৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৪২ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া খাতে ব্যবসা মন্দ থাকার কারণে নিয়মমতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই এ খাতের ঋণ বিতরণের বড় একটি অংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক। এসব কারণে এ খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল এক হাজার ২৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি অঙ্ক এক হাজার ৩৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ১৯.২৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল এক হাজার ১৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ১৬.৪৩ শতাংশ।

মার্চ শেষে চামড়া খাতে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ২.৫৫ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা

বা ১.৮৫ শতাংশ। এছাড়া ২০২২ সালের মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকের এ খাতে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ২৪.২৪ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকে খেলাপির অঙ্ক ছিল ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ২৩.৯৮ শতাংশ।

এছাড়া ২০২২ সালের মার্চ শেষে এ চামড়া খাতে মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৭ হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, বেসরকারি ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকে ১৮২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়ার কদরও কমে গেছে। তবে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। তাই ট্যানারি শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে ৪৩৩ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ২৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ হয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। মূলত এ চারটি ব্যাংকই চামড়া কেনায় ঋণ দেয়। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিলেও তার পরিমাণ খুবই কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে ঈদুল আজহার আগে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা; কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিলেন মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। গত বছরও বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮৩ কোটি টাকা কিন্তু অর্ধেকেরও কম ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগের দেয়া ঋণ খেলাপি হলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে পুনঃতফসিল করা যাবে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে এ তথ্য জানিয়েছে।