চামড়া কারখানাগুলো উদ্বুদ্ধ হোক কমপ্লায়েন্স অর্জনে

রোববার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চামড়া খাত সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন। তার বিস্তারিত জানা যায় গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী: চামড়াশিল্প কারখানাগুলোকে কমপ্লায়েন্স অর্জন করতে হবে’ শীর্ষক খবরে। প্রতিবেদনটি অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পকে ২০১৭ সালের জন্য ‘প্রোডাক্ট অব দি ইয়ার’ ঘোষণা দেন। এরপর স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে শিল্পটির বিকাশে বিশেষ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কথা শোনা যায়। একই লক্ষ্যে চামড়াশিল্পকে প্রদত্ত প্রণোদনার বিষয়টিও গোপনীয় নয়। আলোচ্য অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে সাভার চামড়া শিল্পনগরী থেকে যারা রফতানি করবেন, তারা আরও ৫ শতাংশ বেশি প্রণোদনা পাবেন।’ আশাবাদ, তাতে করে ২০২১ সাল নাগাদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হতে পারে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে আয় হয়েছে আনুমানিক ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এ বিবেচনায় ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশিই মনে হবে অনেকের কাছে। তবু আমরা চাইবো, চামড়া খাত প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাক।

কথা হলো, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে, যদি সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স অর্জন করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি কারখানাগুলো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বলে প্রতীয়মান। অস্বীকার করা যাবে না, এখানটায় কিছু উন্নতি হচ্ছে। তবে তার গতি এতটাই শ্লথ যে, এর প্রভাব সেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না সমাজে। বিশেষত রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একশ্রেণির ব্যবসায়ী যে কাণ্ড করেছেন ও করছেন, তা অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করছেন অনেকে। দফায় দফায় সময় নির্ধারণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আর্থিক ও নীতিগত প্রণোদনা দেওয়ার পরও কেন জানি তাদের সরানো যায়নি হাজারীবাগ থেকে। অথচ সাভারের নতুন স্পটে যে ধরনের সুবিধাদি রয়েছে, তাতে করে কোম্পানিগুলোর পক্ষে কমপ্লায়েন্স পরিপালন অনেক সহজ হতো। আশার কথা, এরই মধ্যে কিছু ট্যানারি মালিক সচেতন হয়েছেন। নিজে থেকে তারা সরে যাচ্ছেন সাভারে, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং বৃদ্ধি করছেন তাদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা। এ সবই সুলক্ষণ। তবু জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন, যেসব কারখানা মালিক স্বেচ্ছায় ও স্ব-উদ্যোগে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিচ্ছেন এবং যেসব কারখানা পুনর্বাসনে প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছেÑউভয়কে প্রদত্ত প্রণোদনায় স্পষ্ট ব্যবধান থাকা প্রয়োজন। উল্লেখ করা অবান্তর হবে না, ট্যানারি সরানোর ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়া এবং বারবার প্রণোদনা ঢালা হয়েছে। তা সত্ত্বেও একশ্রেণির মালিকের মধ্যে অনীহা এখনও দৃশ্যমান। ফলে বাণিজ্যমন্ত্রী রফতানির বেলায় নগদ প্রণোদনার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে নীতিটির পুনর্মূল্যায়ন দরকার। ওতে বলা হয়, সব চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারীকে রফতানির বেলায় ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং যারা সাভারে সরে গেছেন, তাদের জন্য ২০ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের কথা। এক্ষেত্রে সাভারে চলে যাওয়া কারখানাগুলোকে অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। তাতে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় আরও সচেতন হয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন এবং কমপ্লায়েন্স পরিপালনের অভ্যাস গড়ে উঠবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০