সোহেল রহমান: দেশের চার জেলায় বেসরকারি খাতে মোট ২৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন চারটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিচ্ছে সরকার। বিল্ড অন অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে সম্পূর্ণ উদ্যোক্তাদের খরচে নির্মিতব্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও সাড়ে ১৮ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে পূর্ণ মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৯ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আজ বুধবার ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত চারটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতে বিওও ভিত্তিতে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বড়দুর্গাপুর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যবর্তী তিস্তা বাঁধ সংলগ্ন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘোষপাড়া, নন্দীপাড়া, পোড়াবাড়ী ও ফতেহপুর মৌজায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বোয়ালমারী ও মাঝিরপাড়া মৌজায় আট মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। উদ্যোক্তারা নিজস্ব অর্থে ও ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাব-স্টেশন নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করবেন।
সূত্র জানায়, উল্লিখিত চারটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বড়দুর্গাপুর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথভাবে নির্মাণ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনারগন টেকনোলজিস এফজেডই ও চায়না সিনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাব দাখিল করা হয়। ওই প্রস্তাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১৫ টাকা ৬০ পয়সা (দশমিক ১৯৫০ ডলার) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১১ টাকা ০৪ পয়সা (দশমিক ১৩৮০ ডলার) নির্ধারণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সর্বশেষ দরপ্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও সাড়ে ১৮ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের মোট ব্যয় হবে প্রায় তিন হাজার ৫৭৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যবর্তী তিস্তা বাঁধ সংলগ্ন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করবে কনসোর্টিয়াম অব ঝিজিয়াং ডানএন নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন, সোলার টেক পাওয়ার লিমিটেড ও অমিতি সোলার লিমিটেড। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাব দাখিল করা হয়। ওই প্রস্তাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১৬ টাকা ৫৪ পয়সা (দশমিক ২০৬৭ ডলার) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১১ টাকা ২০ পয়সা (দশমিক ১৪ ডলার) নির্ধারণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ দরপ্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও সাড়ে ১৮ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘোষপাড়া, নন্দীপাড়া, পোড়াবাড়ী ও ফতেহপুর মৌজায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথভাবে নির্মাণ করবে কনসোর্টিয়াম অব হ্যানহোয়া ৬৩ সিটি কোম্পানি লিমিটেড, বিজে পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও সোলার সিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাব দাখিল করা হয়। ওই প্রস্তাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১৫ টাকা ২০ পয়সা (দশমিক ১৯ ডলার) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১০ টাকা ৪০ পয়সা (দশমিক ১৩ ডলার) নির্ধারণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গত বছরের ২২ নভেম্বর সর্বশেষ দরপ্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও সাড়ে ১৮ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৬৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বোয়ালমারী ও মাঝিরপাড়া মৌজায় আট মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথভাবে নির্মাণ করবে প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড ও প্যারাসল এনার্জি লিমিটেড বাংলাদেশ এবং হংকংয়ের সিম্বিওর সোলার সিয়াম লিমিটেড। উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক প্রস্তাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১৪ টাকা ৪০ পয়সা (দশমিক ১৮ ডলার) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য ১০ টাকা ৪০ পয়সা (দশমিক ১৩ ডলার) নির্ধারণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গত বছর ১৬ নভেম্বর সর্বশেষ দরপ্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও সাড়ে ১৮ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সপক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘দেশে প্রতিবছর বিদ্যুৎ চাহিদা ১০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০ অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।