নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চার মোবাইলফোন অপারেটরের কাছে ১ হাজার ২৩৫ মিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ৫৪৫ কোটি ৭০ হাজার টাকার তরঙ্গ বিক্রি করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফাইভজি তরঙ্গ বিক্রির এ নিলাম শুরু হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়ে যায়। তবে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অবিক্রীতই থাকে।
নিলাম শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নতুন করে তরঙ্গ বরাদ্দ নেয়ার পর দেশের মোবাইলফোন অপারেটরগুলো তাদের সেবার মান আরও বাড়াতে পারবে। অপারেটরগুলোর গুণগত মানের একটা অংশ স্পেকট্রাম পূরণ করবে। তবে অপারেটরদের ফাইবার অ্যাক্টিভিটিও বাড়াতে হবে।’ তিনি জানান, এ নিলামের মাধ্যমে যে আয় হলো, তা জাতীয় উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘ছয়টি ব্লকের বেশি বেতার তরঙ্গ না নেয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রামীণফোন ও রবি অবিক্রীত ব্লকগুলো নিতে পারেনি। আমি তাদের হয়ে বিটিআরসিকে বলব, এই তরঙ্গগুলো তারা যদি নিতে চায়, তাহলে তাদের যেন একই দামে সেগুলো দিয়ে দেয়া হয়। কেননা আমাদের লক্ষ্য হলো মোবাইল অপারেটরগুলোর সেবার মান নিশ্চিত করা। তারা যেন জনসাধারণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘আমরা ৮৬ শতাংশ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছি। ২২০ মেগাহার্টজের মধ্যে ১৯০ মেগাহার্টজ বিক্রি হয়েছে। ৩০ মেগাহার্টজ আমাদের হাতে থেকে গেছে। আমরা প্রত্যাশার কাছাকাছি গিয়েছি।’
ফাইভজি নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির জন্য ছয় মাসের পরিবর্তে ৯ মাসের সময় মোবাইল অপারেটরগুলোকে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দশ মেগাহার্টজের এক একটি ব্লক ধরে এ নিলামে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০টি এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১২টি ব্লকের ওপর ডাক দেয়ার সুযোগ ছিল। প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ছিল ১৫ বছরের জন্য ৬ মিলিয়ন ডলার, তবে শেষ পর্যন্ত তা ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে।
গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৬০ মেগাহার্টজ করে ১২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয়। আর বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৪০ মেগাহার্টজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক একই ব্যান্ডের ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে।
সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোনের হাতে এত দিন মোট ৪৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ছিল। নতুন তরঙ্গ মিলিয়ে তাদের হাতে মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ। তরঙ্গ মালিকানার দিক দিয়ে গ্রামীণফোনই দেশে শীর্ষে থাকবে। এছাড়া রবি ১০৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংক ৮০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটক ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করতে পারবে।
দেশের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তরঙ্গের নিলাম হলো, যেখানে ফোরজির পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর জন্য তরঙ্গ বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ফোরজি সেবা চালু রয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইলফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে দেশে ফাইভজি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।
নিলামের প্রথম পর্বে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজের প্রথম তিনটি ব্লক (৩০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম) ১৯৫ ডলারে কিনে নেয় টেলিটক।
এরপর রবি ৩৯০ ডলারে ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজের প্রথম ছয়টি ব্লক (৬০ মেগাহার্টজ) কিনে নিলে এই ব্যান্ডের বাকি ছয়টি ব্লক (৬০ মেগাহার্টজ) কিনে নেয় গ্রামীণফোন।
পরে বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজের চারটি ব্লক (৪০ মেগাহার্টজ) কিনে নেয় ২৬০ মিলিয়ন ডলারে।
২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজের শেষ তিনটি ব্লক নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যে নিলাম শুরু হলেও মোবাইল ফোন অপারেটর দুটি তা কিনতে অসম্মতি জানায়।
সর্বোচ্চ ছয়টি ব্লকে ৬০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ কেনার সীমা নির্ধারিত থাকায় গ্রামীণফোন ও রবি নিলামের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারেনি।
বেতার তরঙ্গের মোট ক্রয়মূল্যের ১০ শতাংশ নিলামের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং বাকি ৯০ শতাংশ ৯ বছরে সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবে অপারেটররা।
