নিজস্ব প্রতিবেদক: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণার অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠানের আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে থলে ডটকম ও উইকুম ডটকমের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ‘অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগে অনলাইন টিকেটিং এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকেট ডটকমের এক পরিচালক ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রিং আইডির এক এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
থলে ডটকম ও উইকুম ডটকমের ছয়জন হলেন হেড অব অপারেশন্স নজরুল ইসলাম, অ্যাকাউন্ট অফিসার সোহেল হোসেন (২৭), ডিজিটাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ অনিক (২৮), সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন পিয়াস (২৭), কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ অফিসার মুন্না পারভেজ (২৬) ও সুপারভাইজার মাসুম হাসান (২৭)।
খায়রুল আলম মীর নামে এক ব্যক্তির মামলার পর রোববার ঢাকা সেনানিবাস এলাকার ইসিবি চত্বরের মাটিকাটার ওয়াসি টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন জানান, থলে ডটকম ও উইকুম ডটকমের গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রিক ফ্যান ইত্যাদি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ও অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে অফার দেয়। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করলে জানা যায়, টাকা পরিশোধের ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাদীসহ ভুক্তভোগীরা চেক ও নগদ হিসেবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা তাদের দেয়। কিন্তু টাকা পরিশোধের ৫০ দিন পরও পণ্য সরবরাহ না করে তারা আরও অপেক্ষা করতে বলেন। পরে বাদী তাদের অফিসে গেলে তারা বাদীসহ ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অঙ্কের টাকার চেক দেন। কিন্তু যেসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে চেক দেয়া হয়, সেগুলোতে কোনো টাকা নেই।
অভিযানের সময় ওই ভবন থেকে অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, গন্তব্য লজিস্টিকস সার্ভিস লিমিটেড এজেন্ট চুক্তিপত্র, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে চেক রিসিভ ইনফরমেশন, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, দুটি রেজিস্টার ও টাকা গণনার মেশিন জব্দ করা হয় বলে ইমাম জানান।
সিআইডি কার্যালয়ে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে গতকাল অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে টোয়েন্টিফোর টিকেট ডটকমের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এম মিজানুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে যাত্রা শুরুর পর অনলাইন টিকেটিংয়ের এই এজেন্সিটি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক গ্রাহকের করা মামলায় গত ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এলাকা থেকে টোয়েন্টিফোর টিকেট ডটকমের আরেক পরিচালক মো. রাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিং আইডির অন্যতম এজেন্ট মো. রেদোয়ান রহমানকে (২২) রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার বড়গ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইডি খোলার নাম করে এবং আয়ের নানা ‘লোভ দেখিয়ে’ গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশের অপর একটি দল।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান বলেন, ২০১৮ সালে রেদোয়ান রিং আইডিতে ‘ইউজার’ হিসাবে কাজ শুরু করেন। গত সাত থেকে আট মাস আগে রিং আইডিতে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তখন থেকে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক আইডি বিক্রি করে এক কোটির বেশি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
