শেয়ার বিজ ডেস্ক: শহরের করোনা সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় চার কোটি নগরবাসীর জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলার প্রস্তুতি জোরদার করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে এ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘লোকাল গভর্মেন্ট কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এলজিসিআরআরপি) শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এ ঋণ অনুমোদন করেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগ সংস্থাটি।
মহামারি করোনা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য শহুরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। এ ঋণের অর্থ দেয়া হবে ৩২৯টি পৌরসভায় এবং ১০টি সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা সুবিধা বাড়বে। অবকাঠামো, স্থানীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু প্রভাব, দুর্যোগ এবং ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রকল্পটি দরিদ্র এবং নিন্ম আয়ের মানুষের জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৫ লাখ দিবসের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ুর প্রভাব, দুর্যোগ ও ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাবের থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করবে। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ভালো সমন্বয় ও তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটে আটটি বিভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, কভিড-১৯ মহামারি শহুরে এলাকার দরিদ্র জনগণকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। কভিডে মানুষের আয়-উপার্জনের ক্ষতি করেছে এবং মৌলিক পরিষেবা সরবরাহ ব্যাহত করেছে। তবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো মহামারি থেকে নগরের দরিদ্রদের পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি শহরগুলোকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রকল্পটি মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ও রোগের প্রাদুর্ভাবসহ ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলো সামলানোর পথ দেখাতে পারে। প্রকল্পটি শহরগুলোকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। শহর ভালোভাবে গড়ার প্রয়াসে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের নগরাঞ্চল দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ নগরাঞ্চলে পরিচালিত হলেও কভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের নগরবাসীর স্বাস্থ্যসমস্যা ও বিভিন্ন পরিষেবার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব নিরসনে সরকার মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে এ দায়িত্বের একটি বড় অংশ নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউএলজিআই) ওপর বর্তায়, যারা মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
ইউএলজিআইগুলো নাগরিক সেবা এবং অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল টেকনোলজি, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, ড্রেন নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপনসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে বরাদ্দ পায়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই খাতগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। এছাড়া কভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধন এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।