Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:20 am

চার কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ১৫,২০৯ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: বেসরকারি খাতে লাইসেন্স দেয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দুই মেয়াদে এ খাতে ব্যয় অনেক কম ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছিল আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা। অথচ বিদায়ী অর্থবছর এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ব্যয় প্রায় সোয়া তিন গুণ হয়েছে।

সূত্রমতে, ক্যাপাসিটি চার্জে বড় অঙ্কের এ উত্থানের পেছনে রয়েছে বেসরকারি খাতের বড় চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২৩-২৪ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ৫৩ শতাংশের বেশিই গেছে বড় চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে।

মূলত ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। যদিও পরে সেগুলোর মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে (২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল) বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে জোড় দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের ওপর বড় চাপও তৈরি হয়। যদিও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হচ্ছে না। সাধারণত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় সক্ষমতার ৮০ শতাংশ ব্যবহারের শর্তে লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই দিতে হয়েছে।

পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারতের আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কেন্দ্রটি থেকে। এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট এ কেন্দ্রটির সক্ষমতার ৬২ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে গত অর্থবছর। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে পুরোটার জন্যই। এতে পিডিবির খরচ করতে হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৯২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যদিও বর্তমানে দেশের ভেতর নির্মিত সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পটুয়াখালীর পায়রা। বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। গত অর্থবছর এ সক্ষমতার ৬৫ শতাংশ ব্যবহার হয়। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় চার হাজার ২৯২ কোটি টাকা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাগেরহাটের রামপাল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মালিকানায় নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট। গত অর্থবছর এ সক্ষমতার ২৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। এর বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে দুই হাজার ২৩৬ কোটি ৯২ টাকা। আর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার দেশের তৃতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। চীনের সেপকো থ্রির সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত এ কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট, গত অর্থবছর যার মাত্র ২১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে তিন হাজার ২৮৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

পিডিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত কয়লা সংকটে দেশের সর্ববৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যায়নি। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কয়লা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার পায়নি। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসে থাকার পরও পিডিবির পূর্ণ সক্ষমতার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে সরকারের গচ্চা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।

১৬ বছরের হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলোর জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ সময় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হয়নি। এমনকি কোনো কোনো বছর সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হয়নি। অথচ বসিয়ে রেখেই প্রতি বছরই ক্যাপাসিটি চার্জের পুরোটা পরিশোধ করা হয়।

পিডিবির তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১১ বছরে ৫২ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। তবে শেষ পাঁচ বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর) এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা।