শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশের চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে তিনজন, মুন্সীগঞ্জে একজন, নরসিংদীতে একজন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন।
টাঙ্গাইলে কাভার্ডভ্যান ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের গোলচত্বর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি কাজী আইবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। মাইক্রোবাস বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের গোলচত্বর পৌঁছালে একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা একই পরিবারের তিনজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন সিরাজগঞ্জ সদর থানার সাহেদনগর বেপারীপাড়ার মৃত হাজী কামাল উদ্দিন সরকারের ছেলে হাজী আবদুল করিম সরকার (৬০), করিমের স্ত্রী তোয়ারা সরকার (৫০) ও মেয়ে কানিজ ফাতেমা (৩০)।
আহতরা হলেন নিহত করিমের জামাতা হাজী সেলিম, নাতি সামি, ইমদাদুল হক, রুনা ও মেঘলা। আহতদের সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইলে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মাওয়াগামী গাঙচিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নিতাই কর (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন তার ভাতিজা সাগর কর (২২)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মহাসড়কের কেয়টখীরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিতাই কর উপজেলার ছয়গাও গ্রামের ফলানী করের ছেলে এবং আহত সাগর কর (২২) একই গ্রামের সুধী করের ছেলে।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল বাসেদ জানান, দ্রুতগতির গাঙচিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস সড়কের পাশে থাকা দুই পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এ সময় নিতাই করকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় সাগর করকে শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘাতক বাসটি পুলিশের হেফাজতে আছে ও বাসচালককে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া নরসিংদীর রায়পুরায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় বাদল মিয়া ভাণ্ডারি (৫৫) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাদল মিয়া ভাণ্ডারি একই উপজেলার মরজাল গ্রামের মৃত হাফেজ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাসসহ চালক সালাউদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী তিতাস এক্সপ্রেসের বাসটির স্টিয়ারিং বিকল হয়ে যায়। এ সময় চালক উল্টো পথে বাসটি চালিয়ে যাচ্ছিল। পরে বাসটি মরজাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাদল মিয়াকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা বাস ও চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃত চালকের বাড়ি জয়দেবপুর জেলার হায়দাবাদ এলাকায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুল থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপের ধাক্কায় আহত শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায় (১৪) মারা গেছে। শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট রেডিও সেন্টার সিংপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তনুশ্রী মারা যায়।
নিহত তনুশ্রী রায় কচুবাড়ি বোর্ড অফিস এলাকার হরিদাশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্কুল থেকে সাইকেল নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় পেছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি পিকআপ তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রংপুর যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুবরণ করে সে।
