হারুনুর রশিদ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের কাজের মেয়াদ চার দফা বাড়ালেও উদ্বোধন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হল হস্তান্তরের কথা থাকলেও নির্মাণকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না ঠিকাদারি কোম্পানি ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার দফা। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালের দোহাই দিচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির গাফিলতিই ভবন নির্মাণে দেরি হওয়ার জন্য অনেকটা দায়ী বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মন্থর গতিতে চলছে নির্মাণকাজ। ১৬ তলা ভবনটির অভ্যন্তরীণ সিংহভাগ কাজ এখনও বাকি। পানির লাইন, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ সংযোগ, লিফট, টাইলস ও ভবনের বিভিন্ন কক্ষের রঙের কাজ সম্পূর্ণই বাকি। বাকি রয়েছে অধিকাংশ ঝুল-বারান্দার কাজ। দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ তলায় এখনও লাগানো হয়নি দরজা-জানালা। এত বড় স্থাপনা নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন মাত্র ১০-১২ জন শ্রমিক।
কর্মরত শ্রমিকরা জানান, পুরো ভবনে টাইলস ও রঙের কাজ শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কাজ এখনও অনেক বাকি রয়েছে। কোম্পানি আমাদের সময়মত পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করে না, তাই আমরাও কাজ করতে পারছি না। কবে যে কাজ শেষ হবে সে শঙ্কায় আছি। আমাদের সময়মতো পণ্য সরবরাহ করলে খুব দ্রুতই কাজ শেষ হয়ে যেত।
এ-বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, নির্মাণকাজের তদারকি করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদফতর। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করাচ্ছেও না। কাজ করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদফতর। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। ডিসেম্বরে কাজ শেষ করে জানুয়ারিতে হলটি হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এখন আমরা জানুয়ারিতেই হল বুঝে পেতে চাই।
জানা যায়, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের ওপর। ১১১ কক্ষবিশিষ্ট হলটিতে একটি লাইব্রেরি, একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং, প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট, আটটি গোসলখানা, ছাত্রীদের ওঠানামার জন্য চারটি লিফট স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
দীর্ঘ সময়েও কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ দায় এড়িয়ে বলেন, আমাদের কাজের তদারকি করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদফতর। তাদের কাছে গত বছরের এপ্রিল মাসে নির্মাণকাজ-সংক্রান্ত নথি পাঠিয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত সে নথিতে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ওই নথি অনুমোদন না হলে কবে কাজ শেষ হবেÑসেটা বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা খুব দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু ঠিকাদারি কোম্পানি তা আমলে নিচ্ছে না। এক্সটেনশন বাজেটের অজুহাতে কাজ না করে সময়ক্ষেপণ করছে তারা। আমাকে প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো কাজ না করতে পেরে খুবই হতাশ। জানুয়ারিতে হলে ছাত্রী ওঠার কথা; কিন্তু কাজের যে ধীরগতি, তাতে সম্ভব হবে কি না দ্বিধায় আছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে একটি নথি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটি অনুমোদন হলে খুব দ্রুত হলের কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে পারব। কিন্তু এ নিয়ে কতদিন সময় লাগবে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:24 pm
চার দফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: