চার দিনেও মেরামত হয়নি খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ

সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৩টি গ্রাম প্লাবিত  হয়েছে। বাঁধ ভাঙনের পর চার দিন অতিক্রান্ত হলেও রিং বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি চিংড়ি ঘেরসহ মাছের খামার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে অনেক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোয় নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পানিবন্দি এলাকার হাজারো মানুষ।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর চিংড়ি ও কাঁকড়া খামার। এর মধ্যে পুকুর রয়েছে ১০০টি। চিংড়ি, কাঁকড়া, সাদা মাছ, মাছের পোনাসহ আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ টাকার।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন হলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রণোদনার চেষ্টা করবেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। আর প্রতি বছরই তারা পায় আশার বাণী। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরে না এ উপকূলের মানুষগুলোর। তারা বলেন, গত ১৪ জুলাই রাত ১১টায় প্রবল জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় ১৫০ ফুট জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং প্রবল বেগে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে। এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্বদুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পোড়াকাঠলা, পশ্চিম পোড়াকাঠলা, আড়ঙ্গাশিয়া, করবাড়ী, দাতিনাখালি, ভামিয়া, মাদিয়া ও নীলডুমুর গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব না হলে নতুন করে পার্শ্ববর্তী আটুলিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামও প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। বর্তমানে কলাগাছের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। তাছাড়া ভেসে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের ও দুই শতাধিক কাঁকড়ার ছোট-বড় প্রজেক্ট। চলাচলের রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এবং বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কোনো রকমে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন এলাকার হাজারো মানুষ।

এদিকে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সঙ্গে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ওঠানামা অব্যাহত থাকায় ভাঙনকবলিত অংশে গভীর খাদের সৃষ্টিসহ ভাঙনের বিস্তৃতি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চারদিক পানিতে ডুবে আছে। ভেলায় করে চলাফেরা করতে হয়। চারদিকে পানি থাকলেও কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে হচ্ছে নোংরা ও লবণাক্ত পানিতে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে বদ্ধ পানির মধ্যে থাকার কারণে জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, প্রবল জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় ১৫০ ফুট জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে দুর্গত এলাকায় খাবার

পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, জোয়ারের পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দড়ি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে জোয়ারের তীব্র স্রোত থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০