বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর : চার বছরেও শুরু হয়নি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ভবন নির্মাণকাজ, যদিও কাগজে-কলমে শতভাগ দৃশ্যমান প্রকল্পের অগ্রগতি। পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনেই দৈনন্দিন কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানে না।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত ৬৮টি প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অফিস ভবন ও অবকাঠামোগুলোর সংস্কার আধুনিকীকরণ ও নির্মাণ প্রকল্প চালু করা হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের আওতায় দেশের আট বিভাগের ৬৩ জেলার ১৬৫ উপজেলার মধ্যে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় বিএডিসির অফিস ভবন অবকাঠামোগুলো সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও নির্মাণ করার প্রকল্প চলমান থাকার পরও এখন পর্যন্ত হাজীগঞ্জে শুরু হয়নি ভবন নির্মাণকাজ। প্রকল্পের আওতায় এক টাকারও কাজ হয়নি, কিন্তু কাগজে-কলমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজের ভৌত অগ্রগতি দেখানো হয়েছে শতভাগ!
বিএডিসির বিদ্যমান পুরোনো অফিস ভবন, অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার আধুনিকায়ন এবং নির্মাণের মাধ্যমে কাজের পরিবেশ উন্নয়নপূর্বক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিকরণ ও অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রকল্প চালু করা হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন অফিস ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করে ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম তদারকি জোরদারকরণ, সীমানা প্রাচীর সংস্কার ও নির্মাণ করে বিএডিসির সম্পদ অবৈধ দখলমুক্ত রাখা ও সংরক্ষিত সেচ যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত করার কথা থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি হাজীগঞ্জে। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে বাইরে ফেলে রাখা কৃষিকাজে ব্যবহƒত মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, পরিবীক্ষণ, অগ্রগতি তদারকি সহজীকরণ এবং সেচ নীতিমালা বাস্তবায়ন করা, মাঠ পর্যায়ের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধন ও যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে পুকুর সংস্কার, বৃক্ষরোপণ ও আনুষঙ্গিক কাজ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জে দীর্ঘদিনের পুরোনো বিএডিসি ভবনটি জরাজীর্ণ। হঠাৎ যে কেউ এ ভবনে প্রবেশ করলে মনে হবে, এ যেন পরিত্যক্ত কোনো ভবন। প্রথমে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে গাছের শেকড়ে আচ্ছাদিত ভবনের দেয়াল। একটু ওপরে উঠলেই দেখা যাবে পলেস্তারা খসে পড়ে ভবনের ছাদের রড দেখা যাচ্ছে। এরপর একটু পশিমে গেলেই চোখে পড়বে শীতলপাটি দিয়ে ভবনের জানালা মেরামত করা হয়েছে। পাশেই উপসহকারীর (ক্ষুদ্রসেচ) কক্ষ। যে কেউ দেখলেই মনে হবে যুগ যুগ ধরে এ কক্ষে কারও যাতায়াত ছিল না। মাকড়সার জাল আর ধুলোবালিতে ঠাসা এ কক্ষটিতে বসেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে হাজীগঞ্জের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য।
ভবনের ছাদ ধসে পড়ে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত পুরোনো বিএডিসি ভবনটির সবকটি কক্ষের ছাদ খসে খসে পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ভবনটি নির্মিত হয়েছে সত্তরের দশকে। তার পর থেকে ভবনটির আর সংস্কার করা হয়নি। এ অবস্থায় ভবনটি এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়নি। যে কোনো সময় ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে প্রকল্প সম্পর্কে না জেনে কথা বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, প্রকল্প নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? পরে আবারও কয়েকবার ফোন করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
হাজীগঞ্জের বিএডিসি উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানি না আমি। আপনি জেলায় কথা বলেন। ভূমিকম্প আতঙ্কসহ ভবনধসের ঝুঁকি নিয়েই পরিত্যক্ত এ ভবনে বসে চাকরি করছি। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে এ ভবনেই কাজ করতে হচ্ছে। ভবনটির প্রায় সব কক্ষের প্লাস্টার খুলে খুলে পড়ছে। সামান্যতম বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এতে অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
জেলা বিএডিসি (ক্ষুদ্রসেচ) সহকারী প্রকৌশলী আফিদ কামরুল আশ্রাফি বলেন, এ বিষয়ে আপনি ঢাকায় (প্রধান কার্যালয়) যোগাযোগ করেন।
এ বিষয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ গত সোমবার মুঠোফোনে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি এখন সফরে আছি। আমার স্মৃতিশক্তি অত প্রখর নয়। আমার একাধিক প্রকল্প চলমান। কোনটার কী অবস্থা, আমি এখন বলতে পারব না। চার বছরেও হাজীগঞ্জে বিএডিসি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়িত হয় না। সম্ভবত চাঁদপুরের প্রকল্পটা পরে শুরু হবে।