নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক হতে চায় ব্র্যাক ব্যাংক।
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় আয়োজিত গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ আশা প্রকাশ করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি রেকর্ড ৮০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা অর্জন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৮০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। গত বছর ব্যাংকটিতে নতুন করে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৪ জন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। এসএমই খাতে ব্র্যাক ব্যাংকের অবদান অনেক। গত বছর ব্যাংকটিতে নতুন করে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮ জন সিএমএসএমই গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটি করপোরেট ব্যাংকিংয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ৮ হাজারের বেশি করপোরেট গ্রাহকে সেবা দিচ্ছে।
মুনাফা অর্জন সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আমাদের মুনাফার অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রাহকের আস্তা। গ্রাহক মনে করেন এই ব্যাংকে এসে কখনও ঠকার কারণ নেই। এখনও আমাদের ঋণ ও আমানতের মধ্যে যে স্প্রেড রয়েছে, তা ৪ শতাংশের মতো। অর্থাৎ আমাদের গ্রাহকের আমানত নিয়ে আবার বিজনেসম্যানদের ঋণ দিলে সেখানে ৪ শতাংশের বেশি মুনাফা থাকছে। এই অ্যামাউন্টটা আমাদের প্রফিটের খুবই বড় এমাউন্ট। যদিও উন্নত দেশগুলোয় এ স্প্রেড থাকে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ পয়সা।
চার বছরে কীভাবে শীর্ষ ব্যাংক হবেÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক সুশাসন নিশ্চিত করে। বোর্ডের সঙ্গে দারুণ মিল ম্যানেজমেন্টের। স্বাধীনভাবে বোর্ড কাজ করতে দেন। কোনো বল প্রয়োগ করে না। কাউকে চাকরি বা ঋণ দেয়ার কোনো রিকোয়েস্ট করেন না বোর্ড। এত সুন্দর অন্য কোথাও কাজ করতে পারে না। তাই এমন একটি পরিবেশ থাকলে চার বছরের আগেই শীর্ষ ব্যাংক হওয়া সম্ভব।
করপোরেট বিজনেসও অনেক বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। এমন তথ্য উপস্থাপন করে ব্র্যাক ব্যাংকের ডিএমডি বলেন, আমরা গত তিন বছরে বেশি কিছু সার্ভিস যোগ করেছি; যার কারণে অনেক বড় বড় গ্রাহক আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিন বছরে আমরা করপোরেট ব্যাংকিংয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করেছি। আমাদের ২০২০ সালে করপোরেটে ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এসে ১৭ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাড়িয়েছে।
‘এই ঋণগুলো বাংলাদেশের টপ বিজনেস প্রতিষ্ঠানগুলোতে করেছি; যার কারণে আমাদের রিকভারিও ভালো হয়েছে। যাদের বিজনেস বলিউম ও অনেক বেশি।’
করপোরেট বিজনেস নিয়ে এমডি সেলিম আর এফ বলেন, ‘চার বছর আগে আমাদের করপোরেট বিজনেস ছিলই না। আমাদের কেউ পাত্তা দিত না। আমরা এই কয়েক বছরে সিস্টেমগুলোকে ভালোভাবে তৈরি করার কারণে বড় বড় গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে আসছেন।
গত বছরে রিটেইল ব্যাংকিং তেমন একটা গ্রো করেনি। সবচেয়ে ভালো করেছে এসএমই ও করপোরেট ব্যাংকিং। আমাদের সাব ব্রাঞ্চগুলোও খুবই ভালো করছে।’
তিনি বলেন, আমাদের ৪২টি সাব ব্রাঞ্চ খুলেছি। দেশের যেখানে যেখানে বিজনেস ভালো করছে, সেখানেই আমরা সাব ব্রাঞ্চ খুলছি। প্রতিটি সাব ব্রাঞ্চ থেকে বছরে আমরা প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট পাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাব ব্রাঞ্চের মাধ্যমে আমরা আরও গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। আমরা সারাদেশের গ্রাহকদের সেবা বিস্তারে প্রায় ১৯০টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। এছাড়া ১৬০০-এর মতো এজেন্টে ব্যাংকিং রয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আামদের ডিপোজিটের ৫০ শতাংশ আসে রিটেইল সার্ভিস থেকে, করপোরেট ব্যাংকিং থেকে আসে ৩৫ শতাংশ এছাড়া এসএমই ব্যাংকিং থেকে আসে ১৫ শতাংশ। লোনের ক্ষেত্রে যদি দেখি ৫০ শতাংশ আসে এসএমইতে, ৩৮ শতাংশ আসছে করপোরেট ব্যাংকিং আর সাড়ে বারো আসছে রিটেইলস ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে। এই তিনটা সিগমেন্ট খুবই কমভিনেশন থাকার কারণে ব্র্যাক ব্যাংক ভালোভাবে কাজ করছে।’
‘যখন ৯ শতাংশ লেন্ডিং রেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তখন আমরা বিনিয়োগ শুরু করি টেকনোলোজিতে। আমরা এসএমই লোনের প্রসেসটা খুবই সহজ করেছি। যখন এসএমই লোনের ওপারেটিং কস্ট বেশি তখন আমাদের এই প্রসেস সহজ করার কারণে আমাদের ওপারেটিং কস্ট কমে আসায় এই খাত থেকে আমাদের প্রফিটও বেশি হচ্ছে।’
কর্মীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের ৮ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। এই বিশাল কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে করপোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টে সার্ভিস দিয়ে আসছে। এছাড়া ব্যাংকের প্রধান প্রধান সূচকগুলোয় ইন্ড্রাস্টিজের শীর্ষে অবস্থান করছে।
‘১৮ লাখের বেশি গ্রাহক নিয়ে বিগত ২২ বছরে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে অবস্থান করছে।’
দেশের ডলার মার্কেট নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমাদের যখন পেমেন্টর প্রেসার বেশি ছিল তখন রেটও হু হু করে বাড়াচ্ছে। এখন ডিমান্ড কমে যাওয়ায় ডলারের রেট কমে আসছে।’
‘দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতিতে থাকলেও রেমিট্যান্স ভালো থাকায় ও আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজিটিভ অবস্থানে রয়েছে। সমনে ডলার মার্কেট আরও স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।’