চার বছরে বিএসসির বহরে শূন্য বেসরকারিতে ৪৮টি সংগ্রহ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ পরিচালনায় নিয়মিত আয় বাড়ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএসসি নিট মুনাফা করেছে ২৪৬ কোটি টাকা, যা তিন অর্থবছর আগে ছিল ৪১ কোটি টাকা। অথচ পরিকল্পনায় ২১টি জাহাজ কেনার কথা থাকলেও গত চার বছর নতুন কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি বিএসসি। উল্টো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্ঘটনায় পড়ে বহর থেকে একটি জাহাজ কমেছে। অন্যদিকে গত চার বছরে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ৪৮টি নতুন সমুদ্রগামী জাহাজ নিজেদের বহরে যুক্ত করেছে।

বিএসসি সূত্রে জানা যায়, চীনের অর্থায়নে করপোরেশন ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাংলার জয়যাত্রা, বাংলার সমৃদ্ধি ও বাংলার অর্জন এবং ২০১৯ সালে বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রদূত ও বাংলার অগ্রগতি নামীয় জাহাজ (মোট ছয়টি) সংগ্রহ করে। পাশাপাশি আগের দুটি লাইটার জাহাজ বহরে ছিল।

এবার শেয়ারহোল্ডারদের নিট লাভ থেকে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়। মুনাফা আয় বাড়ানো সুযোগ সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনায় ২১টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনায় থাকলেও গত চার বছর নতুন কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি বিএসসি। অন্যদিকে গত চার বছরে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ৩৫টিরও বেশি নতুন জাহাজ নিজেদের বহরে সংযুক্ত করেছে।

অপরদিকে নৌ-বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ লেনদেন হয়। আর সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের মতো ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে সম্ভাবনাও ব্যাপক আছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০২০ সালে বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা ১৩টি, ২০২১ সালে ১৪টি এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২১টি সমুদ্রগামী জাহাজ নামিয়েছে। এ খাতে দেশীয় শিল্পগ্রুপ কবির, মেঘনা, আকিজ, বসুন্ধরা, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি গ্রুপ ক্রমাগত বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন ৯৬টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বহরে যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি জাহাজ নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষায় আছে।

বিএসসি এমন বাস্তবতা বিবেচনা করে বছর চারেক আগে মোট ছয়টি এলএনজিবাহী জাহাজ কেনার প্রাথমিক প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতার দুটি, এক লাখ ৭৪ হাজার কিউবিক মিটারের দুটি এবং এক লাখ ৮০ হাজার কিউবিক মিটারের আরও দুটি এলএনজি জাহাজ বহরে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লা পরিবহনে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার জন্য ৮০ হাজার টনের দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিএসসি। এছাড়া বিপিসির আমদানিকৃত সব ক্রুড অয়েল

বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য এক লাখ থেকে সোয়া এক লাখ টন ধারণক্ষমতার দুটি নতুন মাদার ট্যাংকার ক্রয়-সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর বিপিসির সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমদানি করা ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য দুটি ৮০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার সংগ্রহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের কিছু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া যায়। আর কিছু এখনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মো. জিয়াউল হক বলেন, বিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে দেশের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরন ও সাইজের ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিক‚লতার কারণে তা সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডুয়েল পুয়েল কনটেইনার জাহাজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া আরপিওর মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকায় আমরা আরও দুটি জাহাজ সংগ্রহের চেষ্টায় আছি।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএসসির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট আয় ৬৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মোট ব্যয় ৩৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৬ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে নিট আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০