নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড ২০২০ সালে পঁুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের নিট মুনাফা ছিল ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল এক টাকা ৪২ পয়সা। অপরদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসে নিট মুনাফা করেছে মাত্র ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) করেছিল মাত্র এক পয়সা। অর্থাৎ পঁুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির নিট মুনাফায় অবনতি হয়েছে ৯৯ শতাংশেরও বেশি এবং শেয়ারপ্রতি আয়ে অবনতি ১৪২ শতাংশ।
ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা নেয় ডমিনেজ স্টিল। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম। দুজনই দেশের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাদের নেতৃত্ব ও মেধায় প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড দেশের সেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হওয়ার স্বপ্ন দেখে বিনিয়োগ করেছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অথচ তালিকাভুক্ত হওয়ার চার বছরের মধ্যে ব্যবসা হয়েছে বন্ধ। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে পঁুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল ৫৬ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা ছিল ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং আর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল এক টাকা ৪২ পয়সা। অপরদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসে মোট বিক্রয় রাজস্ব হয়েছিল ১৩ কোটি টাকা। একই সময়ে নিট মুনাফা করেছে মাত্র ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় করেছিল মাত্র এক পয়সা। অর্থাৎ পঁুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির গত চার বছরের বিক্রয়ে অবনতি হয়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, মুনাফায় ৯৯ শতাংশ এবং শেয়ারপ্রতি আয়ে অবনতি হয়েছে ১৪২ শতাংশ।
‘আইপিও ফান্ড ইটিলাইজেশন রিপোর্ট, জুলাই ২৪’-এ দেখা যায়, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেডে মেশিনারিজ কেনার জন্য এফএ ট্রেডিংকে এক কোটি চার লাখ টাকা দেয়া হয়। আর এফএ ট্রেডিং হলো ফরিদ আহমেদ নামের একজন বিতর্কিত এক শেয়ার ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন। ২০১৮ সালের গত ১৪ জুন ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেডে শেয়ারহোল্ডার ছিল এফএ ট্রেডিং করপোরেশন। তখন ডমিনেজের শেয়ার ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫০টি। এরপর আইপিওতে আসার পর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেয়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা নেয়া হয়। এ টাকা থেকে মেশিনারিজ কেনার জন্য এফএ ট্রেডিংকে এক কোটি চার লাখ টাকা দেয়া হয়, যা রিলেটে পার্টি ট্রান্সজেকশন নীতির লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, চালু আছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। কিন্তু ডিএসইয়ের লোকজন বন্ধ থাকার নিউজ দিয়েছে। আমাদের কাজের ধরন অনুসারে কারখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সাইটে কাজ চলমান থাকে। কিন্তু ইউনিট-২ এ কাজ না থাকায় বন্ধ আছে। এছাড়া ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা ডাউন আছে। আর নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখনও কাজে মন্দা চলছে, কারণ অর্থনীতিও ভালো নয়। নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে না। ফলে কাজের পরিমাণ কম থাকায় ইপিএস কমেছে। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ১০৩ কোটি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ছয় দশমিক ২৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৩ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার মালিকানাধীন রয়েছে। বর্তমানে শেয়ারদর ১১ টাকা ৪০ পয়সায় রেনদেন হচ্ছে। আর বছরের সর্বোচ্চ দর ২০ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দর ছিল ১১ টাকা ২০ পয়সা।