নজরুল ইসলাম: কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের চার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাক্কলন অনুমোদন, দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন অনুমোদন ও কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি তারা। ইচ্ছামতো দর বসিয়ে পণ্য ক্রয় দেখিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বরিশালের রহমতপুরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক আটটি কাজ বাস্তবায়নে এই দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার চার্জশিটের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই চার কর্মকর্তা হলেন অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হাফিজ উল্লাহ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিমুর রহমান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আনওয়ারুল মোনিম ও বান্দরবানের বিএআরআইয়ের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরফুদ্দিন ভূঞা।
দুদক চার্জশিটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, প্রাপ্ত ও জব্দ রেকর্ডপত্র, আসামি ও সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আটটি কাজের তুলনামূলক বিবরণীতে ড. মো. আলিমুর রহমান, মোহাম্মদ শরফুদ্দিন ভূঞা ও ড. মোহাম্মদ আনওয়ারুল মোনিম সর্বনিন্ম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশদেয়ার সুপারিশ করে স্বাক্ষর করেন।
ড. মো. হাফিজ উল্লাহ তা অনুমোদন করে কার্যাদেশ দেন। পরে চূড়ান্ত বিলে ওই তিন কর্মকর্তাসহ ড. মো. হাফিজ উল্লাহ স্বাক্ষর করে বিল পাস করেন। আটটি কাজের ক্ষেত্রে এই চার কর্মকর্তা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধ করেছেন।
আটটি কাজের প্রাক্কলন অনুমোদন, দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন, অনুমোদন ও কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এসব কাজের প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ না করে নিজেদের ইচ্ছামতো দর বসিয়ে পণ্য ক্রয়ে ঊর্ধ্বমূল্য দেখিয়ে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
আটটি কাজ হলোÑগবেষণা মাঠে ফেলিং মেরামত, ১০৯ ঘনমিটার পলিমাটি ক্রয়, একটি কাল্টিভেটর ও একটি উইনার মেশিন ক্রয়; ট্রাক্টর রোটাভেটর, টিলার ও মোটরযন্ত্রাংশ ক্রয়; ডেক্সটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটার ক্রয়, একটি ভারী ক্ষমতাসম্পন্ন রোটাবেটর ক্রয়, এক হাজার ঘনমিটার পলিমাটি ক্রয় এবং আনসার ও কর্মচারীদের বাসা মেরামত।
আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিটে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর বরিশাল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। সেটি তফসিলভুক্ত হওয়ায় তদন্ত করে দুদক বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়। পরে দুদকের তখনকার উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে সহকারী পরিচালক) রণজিৎ কুমার কর্মকার বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি (নম্বর-৩) দায়ের করেন।
২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি দুদক কমিশন চার্জশিটটি অনুমোদন করে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেন। আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।