নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই ব্যাংক খাতে প্রায় আট হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ছিল শীর্ষে। এত পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই ইস্যুতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ছাঁটাই হওয়া কর্মী ও ব্যাংকগুলোর তথ্যে গরমিল পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা যাচাই করতে সরেজমিন পরিদর্শন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে শূন্য হওয়া পদে নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দিকে চার বেসরকারি ব্যাংকে পরিদর্শন শুরু হয়েছে।
ব্যাংকগুলো হলোÑদ্য সিটি, ব্র্যাক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। পাঁচ দিনব্যাপী পরিদর্শনের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) এ পরিদর্শন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিভাগটি মূলত বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রাহক পর্যায় থেকে বা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট যেকোনো ইস্যুতে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোয় কয়েকটি টিম গিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল। আরও কিছু তথ্য দিতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের রুটিন কাজ। এটি নিয়মিতভাবেই করা হয়।’ কিন্তু এ পরিদর্শনের কারণটি বলেননি তিনি।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারির বিষয়টি ঘোষণা দেয় সরকার। ওই মাসেই পুরো দেশ লকডাউনে চলে যায় ৬৬ দিনের জন্য। এ সময়ে জরুরি ছাড়া সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। জরুরি বিবেচনায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খোলা ছিল ব্যাংক খাত।
করোনার সর্বোচ্চ প্রকোপের সময়ও ব্যাংকগুলো কর্মী ছাঁটাই করে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় আট হাজার কর্মী ছাঁটাই করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক রিপোর্ট করেছে সাত হাজার ১৬৭ জনের। এসব কর্মী ছাঁটাই নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে সব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, কর্মীরা নিজ ইচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। কয়েকজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে অদক্ষতার কারণে। কিন্তু ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো কারণ ছাড়াই চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের।
অভিযোগ পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, প্রায় সবার পদত্যাগ পত্রের ভাষা একইরকম। ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ পত্রের ভাষা ও গঠন একই হওয়ার কথা নয় সবার। আবার করোনাকালে যেখানে অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে, সেখানে এতসংখ্যক ব্যাংকার চাকরি ছেড়ে কোথায় গেছেন। বিষয়টি নিয়ে এরকম প্রশ্ন উঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে।
অবশ্য চাকরি ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে ব্যাংকগুলোয়। এ সময়ে অনেকে ফিরেছেন তাদের পুরনো কর্মস্থলে। কিন্তু এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন চাকরি ফিরে না পাওয়া অনেক ব্যাংকার।
ব্যাংকের এ পরিদর্শনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইস্টার্ন ব্যাংকের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. জিয়াউল করিম। ঠিক কী কারণে পরিদর্শন চলছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেই জানতে চান।’