নিজস্ব প্রতিবেদক: চালের বাজারের অস্থিরতা এখনও কমেনি। কারণ আগে প্রতি কেজি চালের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়লেও এখন পর্যন্ত কমেছে চার থেকে পাঁচ টাকা। তাও আবার অনেক বাজারের খুচরা দোকানে এখনও কমেনি। কোথাও আবার আমদানি করা মোটা চালের দাম কিছুটা কম কিন্তু প্রচলিত মাঝারি ও সরু চালের দর বেশি। ফলে এখনও স্বস্তি ফেরেনি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের।
গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে বেসরকারি কর্মচারী এনামুল হক বলেন, অভিযোগ করেও লাভ নেই, এভাবেই চলবে বাংলাদেশ। পাইকারিতে কমলেও বাজারে মনিটরিং টিম নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ইচ্ছামতো দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরা বাজারে সিন্ডিকেট জেঁকে বসেছে।
বাজার পর্যবেক্ষকদের সব স্তরে ভ‚মিকার সমালোচনা করে এ ক্রেতা বলেন, মধ্যবিত্ত আর নি¤œ আয়ের মানুষ এখনও চালের দাম কমার সুবিধাবঞ্চিত। বাংলাদেশে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আনতে পারে না সরকার। এবার খুচরা বাজারে কড়া নজরদারিতে থাকলে এমনটি হতো না।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মগবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫০ টাকায়, বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা, নাজিরশাইল (ভালো মানের) ৬২-৬৫ টাকা, নাজিরশাইল (সাধারণ) ৫৫-৫৭, পারি ৪৮-৫০ টাকা, পাইজাম ৫০-৫৪ টাকা, মিনিকেট কেজিপ্রতি (ভালো মানের) ৫৮-৬২ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকার বলেন, কয়েক দিন আগে সরকার যে অভিযান করেছে, চালের মিলে তাতে অনেকটা উপকার হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তেমন কমেনি। অনেক বাজারে এখনও বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এমন তথ্যে প্রমাণও মেলে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট বাজার ও মুদি দোকানে দামের পার্থক্য লক্ষ করে। কারণ গতকাল পাশাপাশি দোকানে একই চাল প্রায় কেজিতে দুই থেকে চার টাকার পার্থক্য পাওয়া গেছে। সেসব দোকানের বিক্রেতাদের এখনও যুক্তি, একেকজন একেক জায়গা থেকে চাল নিয়ে আসে। আবার অনেকে আগের বেশি দামের চালই বিক্রি করছে। ফলে মোকাম এবং সময়ের কারণে দামের ভিন্নতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে বিক্রিও হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা।
রামপুরা জামতলা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো দোকানি মোটা চালের দাম হাঁকছেন ৫২-৫৪ টাকা। আবার কেউ কেউ চাচ্ছেন ৫২ বা ৫০। এলাকার কমিশনার গলিতে বিক্রমপুর জেনারেল স্টোরে মোটা চালের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫২ টাকা। পাশেই আরেক বিক্রেতা ৫০ টাকা চাচ্ছেন। জানতে চাইলে বেশি দামে চাল বিক্রয়কারী বলেন, দাম কমার পর নতুন করে চাল কেনা হয়নি। উল্টো দাম কমায় লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে পাইকারি বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে এখন ৪৪-৪৫ টাকা কেজি। এখন যদি চার-পাঁচ টাকা লাভেও খুচরা ব্যবসায়ীরা চাল বিক্রি করেন, তবু এর দাম ৪৮ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই তারা যেভাবে খুশি পণ্য বিক্রি করে। যা ইচ্ছা তাই চলছে খুচরা বাজারে।
এদিকে সবজির বাজারেও অস্থিরতা রয়েছে। বাজারে ক্রেতারা পছন্দের সবজি নয়, হন্য হয়ে খুঁজছে কমদামে কোথায় কোন সবজি মিলছে! কারণ একমাত্র পেঁপে ছাড়া কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। তাছাড়া শিম বা টমোটোর মতো অমৌসুমি সবজি কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে শত টাকার ওপরে।
কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেগুন, ঢেঁড়স, পটোলসহ অন্যান্য কাঁচা শাকসবজিতে পরিপূর্ণ রাজধানীর বাজারগুলো। অথচ কমছে না দাম বরং গেল সপ্তাহের চেয়ে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেজিপ্রতি যেকোনো সবজির দামই ৬০ অথবা ৮০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা।
সবজির বাজারে বেগুন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে। এছাড়া শিম ১২০, টমেটো ১২০, শসা ৬০, কচুর লতি ৬০-৬৫, পটোল ৬০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫৫-৬০, করলা ৬০-৮০, কাকরোল ৬০, বরবটি ৬০-৭০, পেঁপে ৪০-৫০ ও কচুমুখী ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুদিপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আটার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দুই টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে তা প্রায় ছয় টাকা। বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৪-৩৬ টাকা দরে। একইভাবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ময়দা। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম আগের মতো রয়েছে।
Add Comment