চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবস্থা নিন 

‘চালের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য: সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। বিক্রেতাদের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্তে¡ও পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। তাদের অভিযোগ, সদ্য শেষ হওয়া বছরে আমন ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।

সম্প্রতি নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী একটি সহযোগী দৈনিককে বলেছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন। সরবরাহ ব্যবস্থায় যাতে কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে, সেটি নিশ্চিত করাই হবে তার প্রধান কাজ। উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিক রাখা, মজুতদারি রোধ এবং প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন তিনি। আর খাদ্যমন্ত্রী তো আগের জনই। গত বছর তিনি বলেছেন, দেশে চালের কোনো অভাব নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়ানো হয়। কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রিপরিষদের দুই সদস্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

বছরের শুরুতে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে রাজধানীর বাজারে ৮ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোটা চাল, প্যাকেটজাত আটা, ময়দা, মসুর ও মুগ ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ চার ধরনের মসলা ও ব্রয়লার মুরগিÑএই ১৩টি পণ্যের দাম বেড়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের লোকজন প্রায়াজনীয় ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চালের মতো ভোগ্যপণ্য স্বস্তি দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। অথচ এখন ভরা মৌসুম। সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যদ্রব্য ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখা। মূল্য স্থিতিশীলতা অর্জন করতে নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলতে হবে।

চালের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু চালের দাম বাড়ে মিলারদের সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে। কারণে-অকারণে চাল সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন তারা। এর আগে যতবারই চালের দাম বেড়েছে, ততবারই মিলারদের কারণেই বেড়েছে। খাদ্যসামগ্রীর বাজারদর স্থিতিশীল রাখার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে মজুতদারি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং গুণগত মানের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের মজুত ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, ভাত এখনও বাঙালির প্রধান খাদ্য। স্বাভাবিক সময়েও চালের বাজার একটু এদিক-সেদিক হলে তা আলোচনায় আসে। তাই কোনোভাবেই চাল ও নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শূন্য সহনশীলতায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

কৃষিতে আমাদের সাফল্য অনেক। কৃষিতে বিভিন্নভাবে ভর্তুকি-প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃষিতে প্রণোদনা দেয়ার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। দাম বাড়াতে হলে অংশীজনদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। যেভাবেই হোক, সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রেখে প্রধান খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নতুন সরকার বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নিলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না। দাম কমানো কখনোই সম্ভব হবে না। তবে মূল্যবৃদ্ধি, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।  মূল্যস্ফীতি চাইলেই কমানো যায় না। সেটি সময়সাপেক্ষ বিষয় এবং অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই তা করার আগ পর্যন্ত সংঘবদ্ধ চক্র যাতে মজুত ও সরবরাহে কারসাজি না করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০