চালের বস্তায় তথ্য প্রদানে মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজারের অস্থিরতা যেন কিছুতেই কাটছে না। এ থেকে উত্তরণে চালের বস্তায় উৎপাদন সংশ্লিষ্ট তথ্য দিতে সরকারের নির্দেশনাকেও দেখানো হচ্ছে বৃদ্ধাঙ্গুলি। ফলে চড়া মূল্যে চাল কিনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা। গত ৭ জানুয়ারির ভোটের পরপরই চালের দাম কেজিতে অন্তত ৫-৬ টাকা মিলগেটেই বেড়ে যায়। এরপর প্রশাসনের অভিযানে এক-দুই টাকা কমলেও তারপর একই অবস্থায় রয়েছে। রমজান সামনে রেখে সরকার শুল্ক কমানোর পরও তার প্রভাব পড়েনি চালের দামে।

চালের বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে আদেশ দেয়া হয়, ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক, ঠিকানা (উপজেলা ও জেলা), নিট ওজন, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্যর তথ্যগুলো ছক মোতাবেক বস্তায় লেখা থাকতে হবে। ঢাকার মহাখালী, খিলগাঁও, গোড়ান বাজার ঘুরে দেখা যায় কোনো বস্তায়ই নেই উল্লেখিত তথ্যগুলো।

এসব বাজারের অনেক দোকানদার জানেনই না সরকারের এই আদেশের কথা। তারা বলছেন, তারা পাইকারিভাবে চাল কেনেন। বস্তায় কেন লেখা হয়নি, তা তারা বলতে পারবেন না। আর মিল মালিকদের দাবি, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সরকার আদেশ দিলেও সেই চিঠি তারা পেয়েছে কয়েকদিন আগে। সরকারের নির্দশমতো বস্তা তৈরি করতে সময় লাগবে আরও মাসখানেক। ছুটির দিনে বাজার করতে আসা অনেকে বলেন, সরকার এক কথা বলবে, ব্যবসায়ীরা আরেক কথা বলবে। মাঝখান দিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কী ছিল সরকারের নির্দেশনায়

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা অকস্মাৎ বাড়লেও মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতাÑএকে অন্যকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দের জাতের ধান, চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজারমূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে, ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয় পরিপত্রে। সেগুলো হলো:

১. গুদাম থেকে বাণিজ্যিক কাজে চাল সরবরাহের আগে বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্য এবং ধান বা চালের জাত উল্লেখ করতে হবে।

ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক, ঠিকানা (উপজেলা ও জেলা), নিট ওজন, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্যের তথ্যগুলো ছক মোতাবেক লেখা থাকতে হবে।

২. বস্তার ওপর উল্লিখিত তথ্যাদি কালিতে হাত দিয়ে লেখা যাবে না।

৩. চাল উৎপাদনকারী সব মিল মালিক (অটো বা হাস্কিং) থেকে সরবরাহ করা সব চালের বস্তা বা প্যাকেটের (৫০/২৫/১০/৫/২/১ কেজি ইত্যাদি) ওপর উল্লিখিত তথ্যাদি মুদ্রিত করতে হবে।

৪. করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিল গেটের দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে।

৫. এ পরিপত্রের আলোকে সব জেলা প্রশাসক/উপজেলা নির্বাহী অফিসার/আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক/জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/খাদ্য পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩’ এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

৬. চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে এ পরিপত্রের নির্দেশ আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

সরকারের কথা কে শোনে

চালের বস্তায় তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক হলেও কেন তা মানা হচ্ছে নাÑএ প্রশ্ন করলে গোড়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন পালটা প্রশ্ন করেন, ‘সরকারের কথা কেউ শোনে?’ তিনি বলেন, ‘সরকার যা ইচ্ছা তা বলে। কিন্তু তা আসলে পালন করা হচ্ছে কিনাÑতা তো দেখে না। সরকারের আদেশে কিছু হয় না, বড় ব্যবসায়ীরা যা ঠিক করে তাই হয়। সরকার তো প্রায়ই চালের দাম ঠিক করে। বাজারে কি সেই দামে বিক্রি হয়? তা তো হয় না। মিল মালিকরা যেই দাম ঠিক করে দেয়, সেই দামেই বিক্রি হয়।’

একই রকমের বক্তব্য খিলগাঁও তালতলা বাজারের শরীয়তপুর রাইস শপের মালিক সিরাজুল হকেরও। তিনি বলেন, ‘এইটা (বস্তায় তথ্য দেয়া) যে করতে হবে তা তো টিভিতে দেখছিলাম। কিন্তু কোনো বস্তাতেই এইসব তথ্য নাই। ১৪ এপ্রিল থেকে এসব তথ্য থাকতে হবে, তা আপনার কাছ থেকেই জানলাম।’

মিল মালিকদের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে তিনি বলেন, ‘এরা কোনোদিনই এটা মানবে না। এটা মানলে তাদের ব্যবসায় লস হয়ে যাবে না? করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের বাজারে সিন্ডিকেট করে ফেলতাছে। সরকার তো দুই দিন পর পর অভিযান চালাবে, আমাদের মতো ছোট খুচরা বিক্রেতাদের ওপর তা চলবে। আমাদের জরিমানা করবে, কিন্তু আসল যারা দোষী তাদের কী ধরবে?’

বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ বি এম খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘আমরা তো অফিশিয়ালি জানলাম মাত্র কয়েকদিন হল। ধীরে ধীরে সব বস্তায় এসব তথ্য দেয়া শুরু হবে।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০