এসএমএসের (খুদে বার্তা) মাধ্যমে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মতো চালের বাজারও অস্থির করে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক। শনিবার বরিশাল মহানগরের ফড়িয়াপট্টি ও চকবাজার এলাকার পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। চালের বড় মিলগুলো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে; তারা কীভাবে জোটবদ্ধ হয়Ñ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আমরা মনে করি, ডিএনসিআরপি ডিজির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এখন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে শারীরিকভাবে উপস্থিতির প্রয়োজন নেই। কভিড-পরবর্তীকালে নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন মতবিনিময়, বোর্ডসভা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান সবই হয়েছে অনলাইনে। তাই ব্যবসায়ীরাও তথ্য আদান-প্রদান করেন অনলাইনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। সে হিসেবে এসএমএস তো পুরোনো বিষয়। দেশে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। বিজ্ঞানের উদ্ভাবন মানুষের কাছে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ, সে বিতর্কও পুরোনো। দুর্ভাগ্য অসৎ উদ্দেশ্যেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছেন আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ। ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার আগেই আমাদের ব্যবসায়ীরা আগে কেনা পেঁয়াজের দামও বাড়িয়ে দেন তাৎক্ষণিক।
ডিএনসিআরপির প্রতিটি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সতর্ক হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয়। যেহেতু কীসের মাধ্যমে ‘বাজারকে অস্থির করা হয়’ তা জানা গেল, তাই প্রশ্ন উঠবে কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হয় না! ডিএনসিআরপির প্রতিটি ইউনিট দায়িত্বশীল হলে অর্থাৎ প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় কার্যক্রম-অভিযান পরিচালিত সুযোগসন্ধানীরা অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হতে পারবে না। অর্থাৎ এক জোটবদ্ধ হওয়া কিংবা একজন দাম বাড়িয়েছে বলে বাকিরাও বাড়িয়েছেÑএমন তৎপরতা বন্ধ করা যায়।
বরিশালে ডিএনসিআরপি ডিজি যা বলেছেন, সেটি নাগরিকদের সচেতন করবে সন্দেহ নেই। তিনি এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো পরিপালন করতে হবে চালকল মালিক, ব্যবসায়ী, সংস্থার লোকবল এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তিনি জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা যেন তদন্ত করে দেখেন আগের কম দামের কেনা চাল মজুত করে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে কি না। তার ভাষায়Ñমজুতের চাল বেশি দামে বিক্রি হয়, সেটাও একটি বড় ঘাপলা।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার তিনটি পন্থা বিচেনা করতে পারে। এগুলো হলো পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানো; খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং বাজার তদারকি জোরদার করা। সরকার টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বাজার তদারকির কাজটি বিশেষ কিছু সময়ে দৃশ্যমান হয়। অথচ এটি সারাবছরই থাকা উচিত এবং সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি চিহ্নিত করতে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করা গেলে বাজার অস্থিতিশীল করা সহজ হবে না। কেননা যতই প্রভাবশালী হোক, কারসাজিতে জড়িতরা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। যারা বাজার অস্থিতিশীল করার কোনো তৎপরতায় জড়িত; তারা সরকারের কোনো আনুকূল্য না পেলে বাজার অস্থিতিশীল হবে না।