চালের মূল্য বাড়ায় ৫ লাখ লোক নতুন করে দরিদ্র হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক:দুই দফা বন্যায় এ বছর চালের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। এতে নতুন করে মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। ফলে সাময়িকভাবে বেড়ে গেছে দারিদ্র্যের হার। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সানেম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। এ প্রবন্ধে বাংলাদেশ অর্থনীতির চলতি বছরের চালচিত্র ও ২০১৮ সালের আনুমানিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়।

এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ক্রমাগত বাড়লেও সেই তুলনায় কমছে না দারিদ্র্য হার। ফলে প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়ের স্বল্পতার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র সামাজিক বৈষম্য।

বিবিএসের উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক মডেল ব্যবহার করে সানেম দেখিয়েছে, এ বছর দারিদ্র্যের হার শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছর চালের মূল্য বৃদ্ধিই এ দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ। এর ফলে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। বড় ধরনের আমদানি সত্ত্বেও চালের দাম বেড়েছে এবং এখনও বাড়ছে। গত ২০১৬-১৭ সালের জুলাই সেপ্টেম্বর মাসে আমদানিকৃত চালের মূল্য ছিল ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ এর সমসাময়িক সময়ে তা বেড়ে দুই হাজার ৯১২ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে।

সানেমের পর্যালোচনা মতে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক হার ছিল এক দশমিক আট শতাংশ, যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়কালে এক দশমিক সাত শতাংশে নেমে আসে। ২০১০ থেকে ২০১৬ এর মধ্যে এটি আরও কমে এক দশমিক দুই শতাংশে নেমে যায়। ২০০০ থেকে ২০০৫ সময়কালে চরম দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক হার ছিল এক দশমিক আট শতাংশ, যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়কালে দশমিক আট শতাংশে নেমে আসে। এ থেকে বোঝা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্য হার হ্রাসের সুযোগ ও সাফল্য সীমিত হয়ে গেছে। হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপির স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্য হার ২০৩০ সাল নাগাদ যথাক্রমে ১০ ও ৪ শতাংশে নেমে আসবে। আর জিডিপির গড় বৃদ্ধির হার আট শতাংশ হলে সামগ্রিক এবং চরম দারিদ্র্য হার ২০৩০ সাল নাগাদ যথাক্রমে সাড়ে পাঁচ এবং দুই শতাংশ হবে।

সানেমের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্ত্বেও দারিদ্র্য হ্রাসে এত ধীর অগ্রগতির পেছনে চারটি কারণ কাজ করেছে। সেগুলো হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ধীরগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে স্বল্প সরকারি ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য।

সানেম সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারি এবং খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ‘ব্যাংকিং কোম্পানি (সংশোধনী) আইন- ২০১৭’ সালের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের চারজন সদস্যকে টানা ৯ বছর ধরে সদস্য থাকার অনুমোদন দিয়েছে, যা ব্যাংক খাতকে আরও ভঙ্গুর করে দিতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী নয় বলেও মনে করছে সানেম। এ প্রসঙ্গে ড. সেলিম রায়হান মন্তব্য করেন, ‘করপোরেট সুশাসনের অবস্থা থেকে আশঙ্কা করছি ২০১৮ সালে ফারমার্স ব্যাংকের মতো ঘটনা আরও ঘটবে।’

তাছাড়া সানেম ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আলোচনা করে। মূলত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে দেশের সামনে। সেগুলো হলোÑনির্বাচনি বছরকে ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে আরও শ্লথগতি, ক্রমবর্ধমান খাদ্যের মূল্যস্ফীতি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অগ্রগতি, রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ এবং ব্যাংক খাত পরিচালনায় অনিয়মের প্রতিকার।

মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করে সানেম। তথ্য ও উপাত্তের নমুনা নির্বাচনে বিবিএসকে আরও সতর্ক হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার। বর্তমান সরকারি ও বেসরকারি কর্মোদ্যোগ এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০