চাল উৎপাদনে শূন্য প্রবৃদ্ধি

নাজমুল হুসাইন: দেশে গত বছর চাল উৎপাদন বাড়েনি। অর্থাৎ ২০১৫-১৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল একই। শুধু ওই বছরই নয়, দেশে আগের তুলনায় এখন চাল উৎপাদন প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। বিশেষ করে, ছয়-সাত বছর ধরে চাল উৎপাদন প্রবৃদ্ধি অনেক কম। আগামী বছরেও এ প্রবৃদ্ধি শূন্যের কোঠায় থাকবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

বাংলাদেশে চাল উৎপাদন শূন্য প্রবৃদ্ধি নিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে চলতি মাসে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক’ প্রতিবেদনে। তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টন। পরের বছরেও উৎপাদনের পরিমাণ একই ছিল। চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য পূর্বাভাসে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা একই রয়েছে। অর্থাৎ ৩ কোটি ৪৫ লাখের ঘরেই রয়েছে। ফলে তিন বছরে প্রবৃদ্ধি শূন্যের কোঠায়।

প্রতিবেদনে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭০-৭১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ টন। পরের ১০ বছরে চাল উৎপাদন বেড়েছে ২৮ লাখ টন। সেই হিসাবে ১৯৮০-৮১তে চাল উৎপাদন হতো ১ কোটি ৩৯ লাখ টন। একইভাবে যথাক্রমে পরবর্তী ১০ বছরে চাল উৎপাদন বেড়েছে ৪০ লাখ টন, ৭২ লাখ টন ও ৬৬ লাখ টন। ২০১০-১১ সালে উৎপাদন এসে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টনে। এরপরও চার বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে ২৮ লাখ টন। অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সালে চাল উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৪৫ লাখ টন। গত দুই বছরে তা একই ঘরে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) বলছে, গত বছর চাল উৎপাদন বাড়েনি। তাদের তথ্যও বলছে, ২০১৪-১৫ সালে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার টন, যা পরের বছর ২০১৫-১৬তেও একই রয়েছে।

চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া নিয়ে কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের প্রধান জোগান আসে বোরো থেকে। বোরো ধান উৎপাদনে সফলতার কারণেই দেশে চাল উৎপাদন এ অবস্থানে এসেছে। তবে এখন বোরো চাষ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ শুষ্ক মৌসুমে এ ধান চাষে খরচ বাড়ছে। ফলে প্রতি বছরই লোকসান গুনছেন কৃষকরা। বোরো চাষে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় ও কৃষকের পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সরকারও বোরো চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, যা এখন সার্বিকভাবে চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।

সম্প্রতি বোরো চাষ কমে যাওয়ার একটি চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ওপর ধানের জমি হ্রাসের কারণ বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে। ব্রি’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ৪৮ দশমিক ৪৬ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৩ হাজার টন চাল। এ বছর বোরো চাষ হয়েছে ৪৬ দশমিক ৬১ লাখ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ লাখ টন কম।

রোরোর দাম না পাওয়া ও উৎপাদনে অনীহার সঙ্গে একমত পোষণ করে ডিএইর সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ চৈতন্য কুমার দাস বলেন, ‘সরকারও বোরোকে নিরুৎসাহিত করছে। তবে আউশ ও আমনে উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চ ফলনশীল জাত ও অধিক পরিচর্চার মাধ্যমে একই ফলন দিয়ে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি ধরে রাখা হচ্ছে।’

ডিএই থেকে প্রাপ্ত তথ্যেও চাল উৎপাদনের হার কমার চিত্র পাওয়া যায়। তাদের তথ্যে দেখা যায়, গত সাত বছরের অর্থাৎ ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত চাল উৎপাদন বেড়েছে ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টন। কিন্তু এর আগে সাত বছরে উৎপাদন বেড়েছিল ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার টন। এরও আগের সাত বছরে উৎপাদন বেড়েছিল ৬৬ লাখ ১৩ হাজার টন।

উৎপাদন বৃদ্ধির এ স্থবিরতা সাময়িক, যা পরিবর্তন সম্ভব বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, ‘বোরো নিরুৎসাহিত করেও বিকল্প উপায়ে চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ হচ্ছে। আউশ-আমনে ভালো জাত আসায় কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন। নতুন এসব জাত বোরোর মতো উচ্চ ফলনশীল। খরচ কম হওয়ায় সেসবে কৃষকরা আগ্রহী হবেন। ফলে এসবের চাষ শুরু হলে পাঁচ বছরের মধ্যে ধান উৎপাদন আগের মতো বাড়বে।’

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০