চাল-ডাল আমদানিতে শুল্ক বাড়াতে চান নেপালের ব্যবসায়ীরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালের চাল, তেল ও ডাল শিল্প সমিতি আমদানির ওপর যথাক্রমে ১৫ ও ২০ শতাংশ শুল্ককর বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে আমদানি নিরুৎসাহিত হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমে। খবর: কাঠমান্ডু পোস্ট।

সংগঠনের ব্যবসায়ীরা অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একই সঙ্গে শুল্ক ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগগুলোকে চাল, ডাল ও তেল রপ্তানিকারকদের রপ্তানি প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান তারা।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুতগতিতে কমে আসায় নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংক (এনআরবি) সম্প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিলাসবহুল পণ্য যেমন গাড়ি, সোনা, কসমেটিকস দ্রব্য আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র দেয়া বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে বিলাসী পণ্যের আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিল্প সমিতি মনে করে, চাল ও ডাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।

সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সুবোধ কুমার গুপ্ত বলেন, চাল ও ডাল আমদানির পেছনে বিলিয়ন রুপি খরচ করে নেপাল। সস্তায় আমদানি করা যায় বলে বিদেশি খাদ্যের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তাই সরকার এ ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশীয় ভোক্তাদের কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৮ শতাংশে। এতে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৬৬০ কোটি রুপি। এর আগের অর্থবছরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৫০ কোটি রুপি। চলতি অর্থবছরের আগামী চার মাসের মধ্যে এ ব্যয় ছাড়িয়ে যেতে পারে। মূলত ভারত থেকে চাল আমদানি করে নেপাল। নেপাল ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কারণে নেপাল চাল ও ডালের ওপর কর আরোপ করতে পারে না। গত ৮ মাসে ১ হাজার ১৬০ কোটি রুপির ডাল আমদানি করা হয়। শেষ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি।

সুবোধ গুপ্তর মতে, ধান ও চালের ওপর বর্তমান শুল্ক যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ। মসুর ডাল ও ডালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, আমরা মসুর ডাল ও লাল বাসমতি চাল রপ্তানিকারকদের ৫ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি।

সাবেক কৃষি সচিব হরি দাহাল বলেন, চাল ও ডালের ওপর শুল্কবৃদ্ধি স্বল্পমেয়াদে রপ্তানিকারকদের জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এতে উপকৃত হবেন কৃষকরা। সস্তায় আমদানি নিষিদ্ধ হলে কৃষকরা ন্যায্য

দাম পাবেন।

তবে উৎপাদন কমে গেলে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না। কেননা এতে বাজারে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দাহাল বলেন, দেশীয় ধান উৎপাদন চাহিদার ৯৫ শতাংশ পূরণ করলেও নেপালের ভোক্তারা সরু চাল খেতে পছন্দ করেন। এ ধরনের চাল দামি এবং আমদানি করতে হয়। তাছাড়া দেশে উৎপাদিত চালের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে ডালের উৎপাদন দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানান দাহাল।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬০ শতাংশ নেপালি নাগরিক এখনও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশটির জিডিপির ২৫ শতাংশ কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল, ১৯৭০ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ। নেপালের বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব নয়। নেপালের কৃষি ও পশুসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মতে, চলতি অর্থবছরে ধানের উৎপাদন কমতে পারে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে আগের অর্থবছরে ভালো আবহাওয়া

ও পর্যাপ্ত কৃষিজীবী থাকায় নেপালের কৃষকরা রেকর্ড ৫৬ লাখ ২০ হাজার টন ধান উৎপাদন করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০