Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:17 pm

চাষাবাদের উত্তম পদ্ধতি

বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টিউলিপ উৎপন্ন করা সম্ভব। কৃষি-কৃষ্টির আজকের আয়োজন এর নানা দিক নিয়ে

টিউলিপ চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুব একটা উপযুক্ত নয়। কেননা এই গাছ যতটা নিম্নি তাপমাত্রায় হয়, বাংলাদেশের তাপমাত্রা ততটা নিচে নামে না। তাই টিউলিপ চাষের ক্ষেত্রে এ দেশে এখন পর্যন্ত শুধু গবেষণা চলছে। গবেষণার পাশাপাশি টিউলিপ চাষের চেষ্টাও চলছে।
চাষের জন্য টিউলিপ বাল্বকে মাটিতে লাগানোর আগে অবশ্যই কোল্ড শক দিতে হবে। এরপর টিউলিপ বাল্বকে বছরের সবচেয়ে শীতল সময়ে লাগাতে হবে। ফুল ফুটলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাল্বকে উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং নতুন করে বাল্ব লাগাতে হবে। শীতপ্রধান দেশে কোল্ড শক দেওয়ার জন্য ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের দেশে বাল্বগুলোকে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা পরিবেশ দিতে হবে। সুন্দর ফুল ফোটানোর জন্য টিউলিপের ক্ষেত্রে আট থেকে ১৪ সপ্তাহের শীতল তাপমাত্রা প্রয়োজন।
টিউলিপ বাল্ব লাগাতে হবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। কারণ সেপ্টেম্বরের আগে শীতনিদ্রার জন্য প্রস্তুত থাকে না ফুলগাছটি। বাল্বগুলো লাগানোর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ফ্রিজেই রাখতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে স্থানে লাগানো হবে সেটি অবশ্যই শীতলীকরণ করতে হবে। সূর্যের নিচে কিছুতেই রাখা যাবে না। টিউলিব বাল্ব ছয় থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রার মাটিতে লাগানো উচিত। এতে শিকড় গজাতে সুবিধা হয় এবং এক্ষেত্রে মাটি ঝরঝরে হতে হবে। কম্পোস্ট সার মিশিয়ে লাগালে ভালো ফুল পাওয়া যাবে। কেউ যদি টবে লাগাতে চান তাহলে বড় টব ও মাটির বেশ গভীরে লাগাতে হবে বাল্বগুলো। বাল্বগুলো যাতে বেশি গরম না হয় সেজন্য মাটির খুব গভীরে লাগানো হয়।
চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে শিকড় হওয়ার জন্য। আমাদের দেশের তাপমাত্রা শিকড় গজানোর বেলায় খুব একটা অনুকূল নয়। তাই চেষ্টা করতে হবে ফ্রিজেই যেন শিকড় গজায়। শিকড় গজালে গাছাটি বসন্তের তাপমাত্রার জন্য তৈরি হয়ে যায়।
মাটিতে লাগানোর পর সেই জায়গায় একটি চালার মতো ছাউনি করে দিতে হবে, যাতে বাল্ব সূর্যের তাপে গরম না হয়। নিয়মিত পানি দিয়ে মাটির তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। আবার গাছের গোড়ায় পানি জমলে বাল্ব নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই ড্রেন তৈরি করতে হবে পানি নিষ্কাশনের জন্য। মোটকথা গোড়ার মাটি হাল্কা ভেজা থাকলেই হবে।
বিদেশ থেকে টিউলিপ সংগ্রহ করা হলে বাল্বগুলো শীতের মাঝামাঝিতে সরাসরি মাটিতে লাগালে চলবে। কেননা বিদেশের বাজারে যে বাল্বগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোতে কোল্ড শক দেওয়া থাকে।

কামরুন নাহার ঊষা

পরিচিতি


১৫৫৪ সালে তুরস্ক থেকে টিউলিপ গাছের বীজ প্রথম ইউরোপে আনা হয় বলে গবেষকরা মনে করেন। এরপর পৃথিবীর উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে। পরে মধ্য এশিয়ায় পরিত্যক্ত আগাছা হিসেবে আগমন ঘটে। এ আগাছা পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠা ফুলটি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে ‘টিউলিপ’ নাম ধারণ করে। আরও পরে টিউলিপের প্রতি নেদারল্যান্ডস ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়। বর্তমানে টিউলিপ ফুলের জন্য দেশটির সুখ্যাতি রয়েছে।
টিউলিপ মূলত বসন্তকালীন ফুল। তবে শীতল তাপমাত্রা উপযোগী উদ্ভিদ। তোড়া সাজাতে এ ফুলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। টিউলিপের প্রায় দেড়শ’ প্রজাতি রয়েছে। এছাড়া এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। টিউলিপ সাধারণত চার ইঞ্চি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর ডাঁটা থেকে ফুল বিকশিত হয়।
টিউলিপ কাপ কিংবা সূর্যমুখী ফুলের আকৃতির হয়ে থাকে। এর তিনটি পুষ্পদল ও তিনটি বহিঃদল রয়েছে। ফলে এর অভ্যন্তরীণ গাঢ় রং দেখায়। বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। গাছ জন্মানোর পর থেকে ফুল ফুটে ঝরে যাওয়া পর্যন্ত এদের গড় আয়ু খুবই কম। প্রায় দেড় মাস এদের আয়ুষ্কাল।
টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী গাছ। নিম্ন তাপমাত্রার উদ্ভিদ। এর বিশেষ বীজ বাল্ব হিসেবে পরিচিত। সাধারণত ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় উৎপন্ন হয়। তাই উষ্ণ দেশগুলোয় শীতপ্রধান দেশের মতো এ গাছের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। শীতপ্রধান দেশগুলোয় টিউলিপ লাগিয়ে কয়েক বছর ফুল সংগ্রহ করা যায়। তবে বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মকালীন দেশে চাষের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। প্রতি বছর বাল্ব লাগানোর প্রয়োজন পড়ে।

এশিয়ার বড়

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের টিউলিপ বাগানটি এশিয়ায় সবচেয়ে বড়। এ বাগানটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে টিউলিপ ছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ রয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এ ফুল বাগানটির মনোরম দৃশ্য উপভোগের জন্য বেড়াতে আসেন। সাধারণত এপ্রিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের জাবারান রেঞ্জের পাদদেশে ডাল লেকের ধারে এ টিউলিপ ফুলের বাগানটি তৈরি করা হয়েছে। সহজ কথায়, কাশ্মীর উপত্যকায় এর অবস্থান। এখানকার টিউলিপ ফুলের কুঁড়ি ও ফুল দুই-ই বেশ আকর্ষণীয়। এ বাগানে ১২ হেক্টর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৮ প্রজাতির ১৫ লাখ টিউলিপ গাছ রয়েছে।

 

টিউলিপ চাষের সম্প্রসারণ প্রয়োজন
টিউলিপ চাষের জন্য বিখ্যাত দেশ হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। বাণিজ্যিকভাবে সেখানে এ ফুলের চাষ হয়। খুব কম সময়ে বাংলাদেশেও এটি পরিচিতি লাভ করেছে। তবে চাষাবাদের উপযোগী না হওয়ায় কৃষকদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
নেদারল্যান্ডসে টিউলিপ চাষে কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ লাভবান হচ্ছেন। ফলে সেখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাষ, তেমনি রফতানি আয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের ফুল। কোনো কোনো দেশে লাল টিউলিপকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশে টিউলিপ ফুলের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়ার না থাকার কারণে এখনও এর চাষ করা সম্ভব হয়নি। টিউলিপ ফুল অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই দেশে এটি চাষাবাদের উপযোগী করে তোলা উচিত। আশার কথা, হাতেগোনা কয়েক উদ্যোক্তা অল্প সংখ্যক টিউলিপ উৎপন্ন করছে, যা বাজারে মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এরই ভিত্তিতে বেকার ও দারিদ্র দূরীকরণে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে এনআইবিতে একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। বর্তমান কর্যক্রম অনুসারে প্রায় ২০ ধরনের টিউলিপ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে, যা নিয়ে দেশের আবহাওয়ায় উপযোগিতা মূল্যায়নের কাজ চলছে।