নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) জমি না দেয়ায় চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন করা যাচ্ছে না মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল রাজধানীর জুরাইন-নারায়ণগঞ্জ অংশ ডাবল লাইন নির্মাণের। কিন্তু মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কয়েক দফা অনুরোধ করলেও নাসিক জমি না দেয়ায় সংশোধিত প্রস্তাবে জুরাইন থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত ডাবল লাইন করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে। কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাজারদর অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধানও আছে। নাসিক মেয়র কেন রেল কর্তৃপক্ষ ও রেলমন্ত্রীর অনুরোধ অগ্রাহ্য করলেন, আমাদের জানা নেই। নিন্দুকেরা বলছেন, ভোটের হিসাব উলটপালট হবেÑআশঙ্কায় রেল কর্তৃপক্ষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি মেয়র।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন বিনা টিকিটের যাত্রীর কারণে ভাড়া থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারছে না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ রুটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী চলাচল করেন। ট্রেন সংখ্যা বেশি হলে নাগরিকরা যেমন উপকৃত হতেন, তেমনি রেলের আয়ও বাড়ত। ডাবল লাইন হলে সাধারণ মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে রাজধানীতে অফিস করতে পারবেন, শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করতে পারবেন সহজে। তখন এ রুটে যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে। সব বিবেচনায় এর রেলপথ ডাবল রেললাইন নির্মিত হলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হবে না।
২০১৯ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে নাসিক মেয়র ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ জমি দিতে সম্মত হন। এখনও সে জমি হস্তান্তর করেনি নাসিক। এতে চাষাঢ়া থেকে ৩০০ মিটার অংশে ডাবল লাইন নির্মাণে ৫১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতেই হবে। আর ওই অংশে টিনশেড থেকে সাততলা ভবন পর্যন্ত রয়েছে। এগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দরকার হবে।
রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণের খবরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়ে। অবশ্যই সরকার সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু পরিত্যক্ত কিংবা নাল জমিকে বসতবাড়ি হিসেবে শ্রেণিবিন্যাসের প্রচেষ্টা থামিয়ে দিতে হবে। চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ প্রস্তাবিত রেলরুটেও ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত কারণে যাতে অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে না যায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যায় চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ অংশটি ডাবল লাইন করতে না পারা দুঃখজনক। রেলপথ ডাবল লাইনবিশিষ্ট হলে জনগণই উপকৃত হবে। আমরা আশা করি, জনগণের স্বার্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র অবস্থান পরিবর্তন করবেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণে জটিলতা দূর করতে হবে।