মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ও চলনবিল অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কুচিয়া মাছ। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়ছে। মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ মাছ চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উৎসাহিতও করা হচ্ছে। চলনবিল অধ্যুষিত এলাকা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলা, নাটোরের গুরুদাশপুর ও সিংড়া উপজেলা, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলাসহ ফরিদপুর অঞ্চলে কুচিয়া’র চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কুচিয়া মাছ দেখতে সাপের মতো। এর রয়েছে বিভিন্ন নাম কুঁচে, কুঁচে মাছ, কুচিয়া, কুইচ্চা বা কুচে বাইম প্রভৃতি। সাইব্রানছিয়াডি পরিবারের অন্তর্গত মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘মনোপটেরাস কুচিয়া’। এটি ইল প্রজাতির মাছ। খেতে সুস্বাদু। মানব দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিকারে এ মাছ উপকারী। সাধারণত কাদামাটিতে থাকে মাছটি। কাদা খুঁড়ে এগুলো সংগ্রহ করতে হয়।
বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলনবিল তথা তাড়াশ উপজেলায় পাকা ড্রামে বিশেষ পদ্ধতিতে কুচিয়া’র প্রজনন ও চাষ হচ্ছে। তাড়াশের কুচিয়া কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতরের কয়েকটি নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া চাষ হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার মাধাইনগর, বারুহাস ও দেশীগ্রাম ইউনিয়নে একটি কমিটি গঠন করে চাষিদের যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ছোট ছোট কুচিয়া সংগ্রহ করে তা এক বছরের প্রজেক্টে বড় করে বিক্রি করছেন।
তাড়াশের বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল কুচিয়া চাষ প্রকল্পের সভাপতি তপন কুমার উরাও জানান, কুচিয়া চাষের জন্য উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় যাবতীয় উপকরণসহ সব প্রকল্পে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটা লাভজনক ব্যবসা বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুচিয়া মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কুচিয়ার খামার। কুচিয়া রাখার জন্য একটি ট্যাংক পাকা করে এর মধ্যে চাষ করা যায়। খাবার হিসেবে কেঁচো, ছোট ছোট মাছ, শুঁটকির গুঁড়ো ও মাছের খাবার দেওয়া হয়। তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারে প্রায় দুই মণ কুচিয়া রয়েছে। এটা একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন খাল বিলে যারা কুচিয়া ধরেন, তাদের কাছ থেকে বাচ্চা কুচিয়া ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে এনে খামারে রেখে বড় করা হয়। এরপর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। একটি কুচিয়া প্রায় এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের হয়। তবে আর্থিক
সমস্যার কারণে তিনি খামারটিকে বড় করতে পারছেন না।
শরীফ আহমদ ইন্না, সিরাজগঞ্জ