Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:04 pm

চাহিদার চারগুণ টিএসপি-ডিএপি দ্বিগুণ ইউরিয়া-এমওপি মজুত

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে চাহিদার প্রায় চারগুণ টিএসপি ও ডিএপি সার মজুত রয়েছে। এছাড়া চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ মজুত রয়েছে ইউরিয়া ও এমওপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

বুধবারের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে তিন লাখ ৫০ হাজার টন। সেখানে বর্তমানে মজুত আছে ছয় লাখ ৫৩ হাজার টন। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ ইউরিয়া আছে। এমনকি মজুতের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছরের একই সময়ে মজুত ছিল পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার টন।

মন্ত্রী জানান, দেশে টিএসপির চাহিদা ৯৬ হাজার টন। এর বিপরীতে চার লাখ ৯৪ হাজার টন টিএসপি মজুত আছে। গত বছরের একই সময়ে মজুত ছিল তিন লাখ ৬৭ হাজার টন। আর বর্তমানে ডিএপি মজুত আছে ৯ লাখ ৪৭ হাজার টন। এ সারের চাহিদা দুই লাখ ১৯ হাজার টন। গত বছর ডিএপি মজুত ছিল সাত লাখ ৮৩ হাজার টন। অর্থাৎ এই দুই ধরনের সার চাহিদার প্রায় চারগুণ মজুত রয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে এমওপি সার মজুত আছে দুই লাখ ৬৮ হাজার টন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই সারের চাহিদা থাকে এক লাখ ২১ হাজার টন। অর্থাৎ চাহিদার দ্বিগুণের বেশি এমওপি মজুত আছে। এমনকি এই মজুতের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছরের একই সময়ে এই সারের মজুত ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার টন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সার নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে সারের কোনো সমস্যা হবে না। আগামী বোরো মৌসুমে আমাদের পর্যাপ্ত সারের দরকার। সেই সারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আর কয়েকদিন পরই রবি মৌসুম শুরু। ১৫-২০ দিন পরই আলু, শাকসবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসল লাগানো হবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আমাদের সারের দরকার হয়। সেই সারের জন্য পর্যন্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

আগাম বন্যার কারণে এ বছর বোরোতে বেশি কিছু ক্ষতি হয়েছের জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য পেয়েছি, এ বছর মার্চ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, এই মৌসুম অনেক আগেই শুরু হয় এবং বৃষ্টি হয়ে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে। অনেক মানুষ সঠিকভাবে ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। এতে উৎপাদন কম হয়েছে। ধান যখন মাঠে ছিল আমাদের কৃষক ভাইরা মনে করেছিলেন বিঘাতে ২০-২২ বা ২৫ মণ পাবেন, কিন্তু যখন মাপছে তখন অনেক কম হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রায় দুই-আড়াই বছর মহামারি এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুটি মিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কৃষির বিভিন্ন উপকরণ ও সার-কেমিক্যালের দাম বেড়েছে। যেমন প্রতি টন পটাশিয়াম ৩০০ ডলার হওয়ার কথা, সেটা আমরা এক হাজার ২০০ ডলারেও কিনেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা কমে এখনও প্রায় ৯০০ ডলারের কাছাকাছি। যেটা ৩০০ ডলার, সেটা কীভাবে ৯০০ ডলারে অ্যাফোর্ট করা সম্ভব? আমাদের মতো ছোট দেশ, গরিব দেশ।

তিনি আরও বলেন, ৬০০ ডলারের একটা কন্ট্রিনার এখন এক হাজার ৮০০ ডলার লাগে। গমের দাম সাধারণত থাকে ২৫০ ডলারের কাছাকাছি। গত ক্রয় কমিটিতে প্রায় ৫০০ ডলারের কাছাকাছি গম কেনার অনুমোদন দিতে হয়েছে। যখন গমের দাম বেশি থাকে তখন মানুষ চালের দিকে ঝোঁকে। আয় অনুযায়ী মানুষ একটু সমন্বয় করে। সবাই না, কম আয়ের মানুষ। আর এখন মানুষের গম খাওয়ার দিকে একটা ঝোঁকও আছে।

ইউরিয়া সার ব্যবহার কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু গতকাল দেখা গেল আরও বেশি করে আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি ইউরিয়ার ব্যবহার কমিয়ে ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ানোর। ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ছে ঠিকই ১৫-১৬ লাখ টন। কিন্তু সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিতে হয়। আমরা ১৬ টাকায় দিচ্ছি অথচ বাজারে ১৪০ টাকা। আর ইউরিয়াতে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছি। প্রত্যেকটা সারে এ রকম ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম ইউরিয়ার ব্যবহার কমাতে। কিন্তু ইউরিয়া দিলে গাছ ভালো হয়; এতে চাষি মনে করে ফলন ভালো হবে। আসলে এমনটা হয় না। ধানে ইউরিয়া বেশি ব্যবহার হলে চিটা বেশি হয়। আর ডিএপি ব্যবহারে গাছের রোগজীবাণু কম হয়। গাছ শক্ত হয়, পটাশিয়াম বেশি পায়।

মন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু আমাদের চাষিদের একটা প্রবণতা হলো, রাতের অন্ধকারে হলেও ইউরিয়া দেবেন। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হই নেই। যারা আমাদের মাঠকর্মী তাদের নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। চাষিদের ইউরিয়া ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

আমন ধান নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কারণ বিলের বীজতলায় বৃষ্টি না হওয়ায় নিচু এলাকায়ও ধানের চারা বপন করতে পেরেছি। এর পাশাপাশি একটা সমস্যাও আছে বৃষ্টি না হওয়ায় চারা বৃদ্ধি পাচ্ছিল না। এখন বৃষ্টি হচ্ছে ফলে আমন দাঁড়িয়ে গেছে।