ইসমাইল আলী: দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও চাহিদা থাকছে ১১ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট। তবে শীতে এ চাহিদা আট হাজার মেগাওয়াটের নিচে চলে আসে। এতে বসিয়ে রেখে গুনতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। এরপরও নতুন করে তিনটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্যে অন্যতম ইউনাইটেড গ্রুপের আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১১ জুন চালু হয় আশুগঞ্জ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। পরে তা আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এতে এক বছর বসিয়ে রাখা হয় কেন্দ্রটি। তবে নতুন করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চুক্তি নবায়নে চলছে পাঁয়তারা।
পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ৫৩ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার কম। অথচ আশুগঞ্জের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই ৮৭০ কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ। এরপরও ওই কেন্দ্রের চুক্তির নবায়নের জন্য নানা তদবির করা হচ্ছে। অথচ এর কাছেই ইউনাইটেডের ১৯০ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আর চাহিদা না থাকায় ওই কেন্দ্রটির সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হচ্ছে না।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন হবে কি না, তা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, চাহিদাসাপেক্ষে গ্যাসভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে চুক্তি নবায়ন করা হবে। তাই চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, চাহিদা থাকায় ভোলায় গ্যাসচালিত আরও একটি কুইক রেন্টালের চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। আর কুমারগাঁওয়ে আরেকটি রেন্টাল কেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এগুলো দেশের স্বার্থে করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন করা উচিত নয়।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিদ্যুতের বাড়তি কোনো চাহিদা নেই। বরং করোনায় গত অর্থবছর চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল। ফলে গত অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্লান্ট ফ্যাক্টর ছিল মাত্র ৪২ শতাংশ, যা পিডিবির ইতিহাসে সর্বনি¤œ। তবে বেসরকারি খাতে গত অর্থবছর রেকর্ড ১০ হাজার ৫৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এরপরও নানা অজুহাতে কুইক রেন্টালের চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ১২ জুলাই চালু হয় ভোলার ৩৪ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাসচালিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। পরে ওই কেন্দ্রের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। গত অর্থবছর এ কেন্দ্রের বর্ধিত চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়। নতুন করে এ কেন্দ্রটির চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এদিকে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে যাত্রা শুরু করে এনার্জি প্রিমার ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন বছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ছিল। পরে তিন বছর করে আরও তিনবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত অর্থবছর এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিও নবায়ন করা হচ্ছে।
পিডিবির তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে ইউনাইটেড আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ২৯ দশমিক ৩৬১১ ডলার। এ হিসাবে ৫৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রের জন্য মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৩৮ ডলার। পরের বার চুক্তি নবায়নের সময় প্রতি কিলোওয়াটের জন্য মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৫ ডলার। এতে ৫৩ মেগাওয়াটের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দাঁড়ায় সাত লাখ ৯৫ হাজার ডলার বা ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এদিকে ভোলার ভেঞ্চার এনার্জির বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রাথমিকভাবে মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ৩২ দশমিক ৮৪৮ ডলার। পরে তা কমিয়ে ১৫ ডলার করা হয়। আর কুমারগাঁওয়ের এনার্জি প্রিমার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রাথমিকভাবে মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ১৫ দশমিক ৯০ ডলার। পরে তা কমিয়ে করা হয় ১৪ ডলার।
চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ কত হবেÑজানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন চুক্তি হবে ‘নো পারচেজ, নো পে’ ধরনের। অর্থাৎ যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হবে, শুধু ততটুকুর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে। আগে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হতো। এখন তেমনটি করা হচ্ছে না। এছাড়া এবার ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। এ চুক্তি পিডিবির জন্য অনেক লাভজনক হবে।
