নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন আয়োজনের দাবি আবারও তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ দাবি জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, ‘আগে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলে দেন, ‘আমি কেয়ারটেকার সিস্টেম মেনে নিচ্ছি। ঘোষণা করুন, আপনি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবেন। তাহলে চা-টা খাওয়া যাবে, অসুবিধা নেই।’
‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে এলে বাধা দেয়া হবে না, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব,’ শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার না দিয়ে এসব হালকা কথা বলে লাভ নেই। এসব চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নেই।
‘আমাদের একটাই কথা পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে আপনি দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন, একটা সত্যিকার অর্থেই যেন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
বিএনপি মহাসচিব এ সরকারকে হটিয়ে দাবি আদায়ে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে একতাবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এইবি) উদ্যোগে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অমানিশা: দুর্নীতি আর লুটপাটের খেসারত’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্যের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
বিদ্যুৎ খাতে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আজকে এত কিছু ঘটছে কেন? দেয়ার ইজ নো অ্যাকাউন্টেবিলিটি। কারও কাছে কোথাও জবাব দিতে হয় না। ৫১ শতাংশ জ্বালানি আসে গ্যাস থেকে। সেই গ্যাসে উত্তোলনের ব্যবস্থা সরকার গত ১৫ বছর করেনি। জ্বালানির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে আজকে বিদ্যুৎসংকট দেখা দিয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই ১৫ বছরে তারা একটা জিনিসের ৬িদকে গুরুত্ব দিয়েছেÑকী করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করা যায়। দেখুন, পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর সঙ্গে কারা কারা জড়িত, তা দেখলেই আপনারা বুঝবেনÑএরা কারা?
‘দেখুন, বিদ্যুতে এই সরকার ইনডেমনিটি দিয়েছে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে এই ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। ইনডেমনিটি যদি দেয়া হয়, তাহলে কী করে আশা করতে পারেন যেখানে দুর্নীতি হবে না, বিদ্যুতে লুট হবে না?’
দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজ ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে দারিদ্র্যের হার, দুই বেলা খেতে পারছে না। আজকে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জÑএই জায়গাগুলোয় ২১ ভাগ লোক দুবেলা খেতে পারে না। এটা আমাদের কথা নয়, এটা একটা জরিপের ফল এটি।
‘প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমে আসছে। চোখে সরষে ফুল দেখবেন, দেখা শুরু করেছেন, যার জন্য আবোল-তাবোল কথা বলতে শুরু করেছে তারা (সরকার)।’
গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামের লোডশেডিংয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে? ফসল উৎপাদন কমে যাবে, ধান উৎপাদন কমে যাবে, ফুড সিকিউরিটির সমস্যা হবে। এটাতে কিউমিউলিটি অ্যাফেক্ট করছে। সারের ক্রাইসিস আসছে। এটাতে পতন অনিবার্য।’
এইবি’র সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাছিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মুইদ রুমি, আবদুস সালাম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী কেএমস আসাদুজ্জামান চুন্ন ও প্রকৌশলী খান মনজুর মোরশেদ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।